প্রথম দেখা গত রোজার ঈদের সময়, সবার মত যশোর জেলার ডিবি পুলিশে কর্মরত এসআই (নিরস্ত্র) মোঃ মফিজুল ইসলাম পিপিএম ও ঈদের নামাজ আদায় করতে পুলিশ লাইন্স মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা করেন।
কিন্তু ঈদের প্রথম জামাত মিস করাতে গেইটের বাহিরেই অপেক্ষা করতে হয় তাকে দ্বিতীয় জামাতের জন্য, হঠাৎ তার চোখে পরে গেইটের পার্শ্বে কয়েক জন বয়ষ্ক মহিলা বসে আছেন। মফিজুল ইসলাম তাদের কাছে এগিয়ে যান এবং কথা বলে জানতে পারেন তারা সবাই মসজিদে আগত মুসল্লিদের কাছ থেকে কিছু আর্থিক সাহায্য পাবার আশায় বসে আছেন।
এক পর্যায়ে একজন বৃদ্ধাকে মফিজুল ইসলাম বলেন, মা আজ ঈদের দিন আমাকে ঈদ সালামি দিবানা, যেই কথা সেই কাজ। কথাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধা মহিলা তার কাছ থেকে ১০ (দশ) টাকার একটি নোট বের করে দেন।
হঠাৎ মসজিদের মাইক থেকে আওয়াজ আসে দ্বিতীয় জামাত এখনই শুরু হবে আপনারা কাতার বন্দি হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ুন, সময় স্বল্পতার কারণে তারাহুরা করে মফিজুল ইসলাম চলে গেলেন মসজিদের ভিতরে। জানা হলো না ঈদ সালামি দেওয়া মায়ের পরিচয় কোথায় থাকেন, কিভাবে চলে তার দিন কাল। নিজের কাছে একটা অস্বস্তিবোধ কাজ করছে।
নামাজ শেষ করে সেই বৃদ্ধ মহিলাকে খুঁজতে থাকেন, তাকে আর পাওয়া গেল না। কিন্তু সেই মাকে খুঁজতে থাকেন মফিজুল ইসলাম, একটি কথা আছে যদি কোন মানুষ মন থেকে কাউকে খুঁজতে থাকে তাকে নাকি একদিন না একদিন পাওয়া যাই। তেমন টাই হলো মফিজুল ইসলামের ক্ষেত্রেও হঠাৎ সন্ধান মিললো সেই বৃদ্ধ মহিলার, জানা গেল সেই মায়ের আসল পরিচয়, তার নাম আয়শা বেগম, বয়স-৮০ বছর , তার স্বামী রইছুদ্দিন সরদার ২০/২৫ বছর আগে বিদ্যুৎপিষ্ট হয়ে মারা যায়।
তার ১ ছেলে ও ১ মেয়ে, স্বামী হারিয়ে ছেলের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু বিধিবাম, তাঁর ছেলে ১৫/১৬ বছর আগে রোড এক্সিডেন্টে পঙ্গু হয়ে ঘরে বসা। মেয়ে জনখাটা এক ছেলের নিকট বিবাহ দিয়েছেন। ভিক্ষা করেই তিনি কোনরকম দিনাতিপাত করেন । যশোর উপশহরের শিশু পার্ক সংলগ্ন বস্তিতে ভাঙ্গা একটি ঘরে তাঁর বসবাস।এতোদিন পরে সেই মায়ের খোঁজ মিললো।
মফিজুল ইসলাম ভাবলেন যে মা আমাকে ১০ (দশ) টাকা সালামি দিয়ে চমকে দিয়েছেন আমিও সেই মাকে চমকে দিবো্। যেই ভাবনা সেই কাজ, বাজার থেকে মার জন্য ছেলে নিজ হাতে বাজার করলেন।
বাজার সামগ্রীর মধ্যে ছিলো আম, কলা, মুরগি, নিজের রেশনের চাল, ডাল, আটা, তেল, এবং নিজ বাসায় রান্না করা খাবার সহ একটি নতুন শাড়ি। এবার মফিজুল ইসলাম রওনা করলো সেই মায়ের কাছে, ঝুঁড়ি ভর্তি বাজার আর হাতে শাড়ি নিয়ে মায়ের দরজায় ছেলের আগমন এমন অবাক করা ঘটনা দেখে মা আবেগাপ্লুত হয়ে পরেন এবং সন্তানের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেন।
সত্যিই এমন ঘটনা নিজ চোখে দেখলে আনন্দে চোখে এমনিতেই পানি চলে আসবে।