নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও অনৈতিক ভাবে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ, বিদেশে টাকা পাচার, লুটপাট, দুঃশাসন, গণতন্ত্রহীনতা, দমন-পীড়ন রোধ, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়া এবং সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালুর দাবিতে সমাবেশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি।
সোমবার (১২ডিসেম্বর) বিকেল ৪ টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ সমাবেশ করেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা ‘সিপিবি’র সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শিবনাথ চক্রবর্তী, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য আঃ শরীফ, শাহানারা বেগম, জেলা কমিটির সদস্য দুলাল সাহা, জাকির হোসেন, মনিরুজ্জামান চন্দন, ইকবাল হোসেন, এম এ শাহীন প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার ভোট ডাকাতি করে অনৈতিক ভাবে ক্ষমতায় এসেছে। জনগণের প্রতি এই সরকারের কোন দায় নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়ার পরিবর্তে সরকার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। দ্রব্যমূল্য ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে জনজীবন আজ ভীষণভাবে বিপর্যস্ত। দৈনন্দিন জীবনের ব্যয় সীমাহীন ভাবে বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ তাঁদের আয়-ব্যয় সমন্বয় করতে পারছে না। চরম সংকটে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সবকিছুর দাম বেড়েছে কিন্ত শ্রমজীবি মানুষের মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না। মজুরি কমিশন বোর্ড পূর্ণ ঘটন করে জাতীয় নিম্নতম মজুরী ২০ হাজার টাকা ঘোষণা ও বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
বর্তমান সরকারের গণতন্ত্র হরণ করে মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। গণমাধ্যমকে ভীতির মধ্য কাজ করতে হচ্ছে। সরকারের কাছের লোকেরা এক একটি ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। ফলে দেশের অর্থনীতি আজ চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। জননিরাপত্তা নেই, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্বিষহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সব ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। মুক্ত বাজারের নামে লুটপাটের অর্থনীতি বহাল রেখে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা যাবে না। বাজার অর্থনীতির বিপরীতে জনস্বাথের্র অর্থনীতিতে দেশ পরিচালনা করতে হবে। নয় তো দেশের অবস্থা আরও শোচনীয় হবে। দেশ ও দেশের জনগণকে রক্ষা করতে হলে লুটেরা ধনীক শ্রেণীর ব্যবস্থা বদলাতে হবে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বর্তমান সরকার জনবিচ্ছিন্ন পায়ের তলার মাটি নেই। গদি রক্ষার জন্য ভয়ের রাজত্ব কায়েম করছে। বিরোধীদলের সভা-সমাবেশে সরকারি দলের সন্ত্রাসী ও পুলিশ যৌথভাবে হামলা করছে। মিথ্যে মামলা দিয়ে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের জেলে পুড়ছে। জনগণের কণ্ঠরোধ করতে সরকার নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। সরকারের এই স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষকে রুখে দাঁড়াতে হবে। সরকার কারসাজি করে আবার ক্ষমতায় বসার ছক কষছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে মানুষ ভোট দিতে পারবে না। দিনের ভোট রাতেই হয়ে যায়। সরকারকে পদত্যাগ করে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু করতে হবে। সরকারের দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে জনগণের সরকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নেতৃবৃন্দ সাধারণ মানুষকে একতাবদ্ধ হয়ে গণআন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানান।