দালাল সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে নারায়নগঞ্জ খানপুর ও ভিক্টোরিয়া সদর আধুনিক হাসপাতাল। ভেতরে বাহিরে বাহিরে জায়গায়ই যেন দালালের কাছে জিম্মি সেবা প্রত্যাশী সাধারণ মানুষ। হাসপাতালে জরুরী বিভাগের সামনে সেবা নিতে আসা কোন পৌছানোর মাত্রই ব্যবস্থাপত্র নিয়ে শুরু হয় টানা হেচড়া। অল্প টাকা চিকিৎসার আশা দিয়ে অন্যত্র সড়াতে পারলেই তাদের কাজ সাড়া, বাকী দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের।
রোগীর হাতে টিকেট দেখা মাত্রই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন দালালরা। রোগীরা যখন জানতে চায় পরীক্ষা করাব, রুমটা কোথায়? তখনই দালালরা কৌশলে রোগীকে ভুল বুঝিয়ে বলে এখানে পরীক্ষা করালে ভালো হবে না। মেশিন নষ্ট, সরকারি পরীক্ষা ভালো হবে না। আমার সঙ্গে চলেন কমের মধ্যে করিয়ে দিব। এভাবে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোগীদের নিয়ে টানাটানি করেন প্রায় অর্ধশতাধিক দালাল।
একটু ভালো আর বিনামূল্যে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পেতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড় আশা নিয়ে দরিদ্র রোগীরা হাসপাতালে আসে। কিন্তু এখানে এসেই তাদের পড়তে হয় বিপাকে, নানা বিড়ম্বনায়। হাসপাতালের প্রবেশ গেট থেকে শুরু করে কেবিন, বেড পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এক শ্রেণির দালাল। নানা প্রলোভন, যেমন দ্রুত ডাক্তার সেবা পাইয়ে দেয়া, প্রয়োজনীয় ঔষধ, থাকার জন্য কেবিন ইত্যাদি দেখিয়ে তারা দরিদ্র ও সহজ সরল রোগীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এক রকম সর্বস্বান্ত করে ছাড়ে। বিষয়টা অনেকটা এমনই- আগে টাকা পরে চিকিৎসা সেবা। এদের খপ্পরে পরে অনেকেরই চিকিৎসা সেবা তো দূরের কথা উল্টো দ্বিগুণ অসুস্থ হয়ে কখনো হাসপাতালের বারান্দায়ও শুয়ে কাতরাতে দেখা যায়। ওই সব দালালই এই পর্ব শেষে আবার সরকারি মেডিকেলের কাজের হতাশাপূর্ণ বর্ণনা দিয়ে প্রাইভেট ডাক্তারদের কাছে চিকিৎসা নিতে উদ্বুদ্ধ করে।
নাম গোপন রাখার শর্তে এক দালাল জানান, জেনারেল হাসপাতাল এলাকায় গড়ে ওঠা বেসরকারি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মালিক, হাসপাতালে কর্মরত কিছু অসাধু চিকিৎসক ও কর্মী, অবৈধভাবে পার্কিং করা ইজিবাইকচালক মিলে একটি দালাল চক্র তৈরি হয়েছে। ব্যবস্থাপত্রে রোগীদের অহেতুক অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা লিখে দালালের মাধ্যমে ওইসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হয়। প্রতি রোগী বাবদ একজন দালাল ১০০ টাকা পেয়ে থাকেন। একইভাবে সমপরিমাণ টাকা কমিশন পেয়ে থাকেন হাসপাতালের কর্মকর্তারা।
হাসপাতালের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল দালাল চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করে। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাইলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। মাঝেমধ্যে চিকিৎসকরা দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে তাদের রোষানলে পড়তে হয়।