নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া শহীদ মিনারে কিশোর গ্যাং কালচার দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়া থেকে শুরু করে চুরি, ছিনতাই, যৌন হয়রানি, মাদক ব্যবসায়সহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এমনকি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কিংবা অন্য গ্যাংয়ের সাথে তুচ্ছ বিরোধকে কেন্দ্র করে খুনখারাবিতে জড়াতেও পিছপা হচ্ছে না কিশোর অপরাধীরা। উদ্বেগের বিষয় হলো, মাদক নেশার টাকা জোগাড় করতে ছোটখাটো অপরাধে জড়ানো কিশোর অপরাধীরা বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর অপরাধী, এলাকার ত্রাস। আরো উদ্বেগের বিষয়, ভাড়াটে হিসেবে তারা মানুষ হত্যা কিংবা নির্যাতনের মতো অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। তাদের অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছে না জন্মদাতা মা-বাবা ও ভাইবোন।
নারায়ণগঞ্জ শহরের বিনোদন হোক কিংবা সমাগমের কেন্দ্রবিন্দু বলতে বোঝায় চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। শহর ও শহরতলীর যেকোন প্রান্তর থেকে এখানে লোকজন এসে জড়ো হয়। বিশেষ করে শহরের ভেতরে উন্মুক্ত স্থান তেমন একটি না থাকায় এই শহীদ মিনারে সকাল থেকে লোকসমাগম দেখা যায়। বিগত দিনে সাধারণত সংস্কৃতি কর্মীদের আড্ডাস্থল ছিল এই শহীদ মিনার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সংস্কৃতিকর্মীদের স্থান দখল করে নিয়েছে বখাটে কিশোর গ্যাং আর ছিনতাইকারী চক্র।
শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় ছিনতাইকারী চক্র। চাষাঢ়া শহীদ মিনার ও সংলগ্ন এলাকায় বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকেই আনাগোনা থাকে ছিনতাইকারী চক্রের। প্রায়শই সাধারণ নিরীহ মানুষকে টার্গেট করে মোবাইল ও টাকাসহ মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারী চক্র। এছাড়া প্রায়ই কিশোর গ্যাংদের মধ্যেও হাতাহাতি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
পূর্বে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পুলিশের একটি টিমকে অবস্থান করতে দেখা যেতো কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে শহীদ মিনারে পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়না।
শহীদ মিনারের আশেপাশের দোকান ব্যবসায়ীরা জানান,শহীদ মিনারে একদল নামধারী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় ছিনতাই কার্যক্রম চলমান রয়েছে এমনকি নারী পাচারের মত অপরাধেও শেল্টার দিচ্ছে ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ।
তারা আরো জানান,র্যাব,ডিবি,পুলিশ প্রশাসন যাতে অতিশীঘ্রই সুষ্ঠু তদন্ত করে এইসকল অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসেন।
পুলিশ প্রশাসনের প্রতি এলাকাবাসীর দাবি, কিশোর গ্যাংয়ের সাথে জড়িত সব সদস্যকে যেন দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনা হয়। শুধু তাই নয়, এই মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সক্রিয় সব কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে এলাকাবাসীকে কিশোর গ্যাংয়ের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে হবে। সাথে যে সব নেতার কারণে পিতা-মাতার সন্তান নষ্ট ও পথভ্রষ্ট হয় সেই সব রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
কিশোর গ্যাং কালচারের পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও পেশাদার সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতাকেও দায়ী করছেন সমাজ বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, অবস্থা এখন এমন জায়গায় চলে গেছে যে, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে সামাজিক আন্দোলন জরুরি হয়ে পড়েছে।
তারা আরো বলছেন, আগামী প্রজন্মকে অপরাধমুক্ত রাখতে হলে কিশোর গ্যাংয়ের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। তা না হলে দিন দিন পরিস্থিতি আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। বস্তুত আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, সমাজ ও পরিবারের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া কিশোর গ্যাং কালচার থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নেই। কিশোর গ্যাংয়ের যেসব সদস্যকে কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে- সেখানে তারা সংশোধিত হওয়ার পরিবর্তে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে বেরিয়ে আসছে। কিশোর সংশোধন কেন্দ্রগুলো কেন কিশোর অপরাধীদের অপরাধপ্রবণ চরিত্র পাল্টাতে পারছে না, তা গভীরভাবে ভাবতে হবে।