নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১২ ও ১৫ নং ওয়ার্ডের কৃষকের বাজার দুটি নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদা পূরণে নগরবাসীর মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ‘
এলাকা ভিত্তিক কৃষকের বাজার স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বাজার দুটি বর্তমানে চলমান আছে। প্রকল্প শেষে বাজারগুলো চলমান রাখতে হলে সিটি কর্পোরেশনের সম্পৃক্ততা আবশ্যক।
আজ (২৭ মার্চ) বেলা ১২টায় নারায়ণগঞ্জের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে কৃষকের বাজারের অভিজ্ঞতা বিষয়ক সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প কর্মকর্তা অপর্ণা মৌটুসী। সভায় বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৫ নং ওয়ার্ডেও কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ^াস, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার নারায়ণগঞ্জের ফুড সিস্টেমসিটি কো-অর্ডিনেটর মো. আনোয়ারুল ইসলাম।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন দৈনিক কালবেলার নিজস্ব প্রতিবেদক আবু আল আমিন খান মিঠু, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির জেলা প্রতিনিধি হাসানুল রাকিব, দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ এর পরামর্শক সম্পাদক মো. ইমতিয়াজ আহমেদসহ স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ। আরো উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থার ন্যাশনাল জিআইএস স্পেশালিস্ট সায়মুন্নাহার রিতু।
কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ^াস বলেন, কৃষকের বাজারে যে পণ্যগুলো আসে তা নিরাপদভাবে উৎপাদিত। আমরা কৃষকের ক্ষেত পরিদর্শন করে তাদের চাষ পদ্ধতি দেখেছি। বাজারগুলো টেশসই করার ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যবস্থা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
সিটি কর্পোরেশনের সরাসরি সম্পৃক্ততার মাধ্যমে আরো কিছুদিন প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে। আমরা বাজার কমিটির মাধ্যমে টেকসইকরণে কাজ করছি। ইতোমধ্যে টঙ্গীবাড়ি কৃষি কার্যালয়ে আমরা সভা করেছি কৃষকদের সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে। বাজারটি প্রকল্প শেষে কিছুদিন টেশসই করার জন্য আমরা একটি তহবিল তৈরি করছি।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থার নারায়ণগঞ্জের ফুডসিস্টেম সিটি কো-অর্ডিনেটর মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমরা ঢাকার সিটি কর্পোরেশনে খাদ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছি। কাঁচাবাজার উন্নয়ন, ছাদকৃষি, কৃষকের বাজারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
কৃষকদের নিরাপদ চাষ ও কৃষিব্যবসা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ এর বক্তাবলী থেকে দুটি কৃষকের বাজারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় মোট ৬০ জন নিরাপদ চাষ করেন এমন কৃষককে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রতিবাজারে ১০ জন কৃষক উপস্থিত থাকেন। বাজারগুলো টেকসই করা গেলে খাদ্য ব্যবস্থা উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা সম্ভব। এক্ষেত্রে মিডিয়া কর্মীদের সুপরামর্শ আশা করছি।
সভায় বক্তারা বলেন, কৃষকের বাজার নিঃসন্দেহে একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ। বাজারটি টিকিয়ে রাখতে কৃষকের বাজারের জন্য সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্দিষ্ট জায়গা প্রদান প্রয়োজন। সেই সাথে কৃষকদের সম্পৃক্ততা বজায় রাখতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সদিচ্ছা জরুরি।
বাজারগুলো আরো জনবহুল জায়গায় আয়োজিত হলে মানুষের জন্য প্রবেশগম্য হতো এবং আরো বেশি মানুষ উপকৃত হতো। কৃষকদেও নিরাপদ চাষে আরো বেশি উৎসাহিত করে তুলতে হবে, তাহলে পণ্যেও সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে কৃষকের বাজাওে অংশগ্রহণের জন্য কৃষকদের সার, বীজসহ বিভিন্ন সুবিধাদি প্রদান করা হলে তারা এ কার্যক্রমে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
কৃষকদেও কতটা লাভ হচ্ছে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা প্রয়োজন। যথাযথ লাভ পেলে তাদেও পরিবহনের দায়িত্ব তারা নিজেরাই নিতে পারবেন। আরো অন্তত এক বছর প্রণোদনা দেয়া গেলে তাদেও এক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে সক্ষমতা তৈরি হবে।
বক্তারা আরো বলেন, বাজারের কার্যক্রম, পুষ্টিকর খাদ্যেও সহজলভ্যতা ইত্যাদি বিষয়ে আরো প্রচারণা প্রয়োজন। নিরাপদ খাদ্য পেতে চাইলে সব ধরণের সবজির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা কঠিন। তবে উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে ভোক্তা ও কৃষক উভয়ের জন্যই উপকারি। কৃষকরা উপকৃত না হলে তারা অংশগ্রহণ করতেন না। বাজারগুলো টেশসই করার পাশাপাশি অন্যান্য ওয়ার্ডেও কৃষকের বাজার স্থাপনের উদ্যোগ প্রয়োজন।