নারায়ণগঞ্জের ত্রাস জগতের আতংক ও সাজাপ্রাপ্ত আসামী বিএনপির সাবেক ছাত্রদল সভাপতি জাকির খানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব -১১। শনিবার ৩ সেপ্টেম্বর বেলা ১২টায় সিদ্ধিরগঞ্জে সংস্থ্যাটির সদর দপ্তর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এরআগে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে অস্ত্রসহ তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের একটি দল।
জানা গেছে, জাকির খান দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর বাংলাদেশের বাহিরে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল।সেখান থেকে বসে রাজনীতি ও বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করছিলো জাকির খান। পুলিশের তালিকাভুক্ত এ শীর্ষ সন্ত্রাসী এক সময়ে ছাত্রদলের রাজনীতি করে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে বিএনপির রাজনীতিতে জড়ানোর পরেই ক্রমশ খলনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তার বিরুদ্ধে জুট সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী, হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়াও ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার আততায়ির গুলিতে নিহতের ঘটনায়ও জাকির খানকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার। যার ব্যপক অপরাধমুখী কর্মকান্ডের কারণে নারয়ণগঞ্জের ত্রাস জগতেও এক আতংকের নাম হয় উঠে জাকির খান।
সূত্র মতে, ১৯৮৯ সালে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের হাতে ধরে জাতীয় পার্টির ছাত্র সমাজে যোগদানের মাধ্যমেই জাকির খানের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তার পিতা দৌলত খান ছিলেন তৎকালীন টানবাজার পতিতালয়ের গডফাদার। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জাকির খানের সাথে নাসিম ওসমানের বিরোধ বাধলে কামালউদ্দিন মৃধার নেতৃত্বে সে ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেয়। এক পর্যায়ে দেওভোগ এলাকার অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পেছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে দুধর্ষ হিসেবে শহরে পরিচিত হয়ে উঠেন জাকির খান। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে জাকির খান শহরের খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাঙ্গচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রাপ্ত হয়ে জেলে যায়। একই বছরে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার ৭ মাসের মাথায় কাশীপুর বাংলা বাজার এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবীর অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় দ্বিতীয় দফায় জাকির খানের ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড হয় এবং জেলে যায়। ১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য জেল থেকে বের হয়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদটি পেয়ে যান।
আওয়ামী লীগের শাসনামলের শেষ দিকে ২০০০ সালে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ থেকে টানবাজার ও নিমতলী পতিতালয় উচ্ছেদ করে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও প্রায় ৫ মাস জেলে থাকেন জাকির খান। ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শহরের ডিআইটিতে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় যেখানে জনতার ঢল নামে। সর্বশেষ ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী তৎকালীন জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও বিআরটিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার আততায়ির গুলিতে নিহত হয়। এ ব্যাপারে জাকির খানকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন তৈমুর আলম খন্দকার। এর পর জাকির খান নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পাড়ি জমায় থাইল্যান্ডে। পরে আবার তিনি দেশে গোপনে ফিরে আসেন। আর র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন।