তার সুর আর বাণী দোলায় বাঙালির অন্তর। সীমাহীন প্রেম, প্রকৃতি, প্রার্থনা, জীবন এবং জগতের সকল অনুভূতি মিশেছে যেন তার গানে। তার সংগীত শ্রোতাকে ভাসায়, অজানা অনুভূতির সন্ধান দেয়। এই সংগীতেই সবচেয়ে আপন করে পাওয়া যায় তাকে। তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ শনিবার বাইশে শ্রাবণ, কবির ৮১তম প্রয়াণ দিবস। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে তার জীবনাবসান ঘটে। জীবদ্দশায় বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতার সঙ্গে বিচরণ করেন তিনি।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ৮ বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন। একাধারে তিনি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রকাশিত মৌলিক কবিতাগ্রন্থ ৫২টি, উপন্যাস ১৩টি, ছোটগল্পের বই ৯৫টি, প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ ৩৬টি, নাটকের বই ৩৮টি।
কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন।
কলকাতায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে এক ধনী ও সংস্কৃতিবান পরিবারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম। বাবা ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মা সারদাসুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তার বাবা মায়ের চতুর্দশ সন্তান।
শৈশবে গৃহশিক্ষকের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। এরপর তিনি কলকাতা নর্মাল স্কুলে ভর্তি হন। তিনি পড়াশোনার জন্য ১৭ বছর বয়সে বিলাত যান। সেখানে ব্রাইটন পাবলিক স্কুল ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতার বই বনফুল প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ সাহিত্য জীবনে তিনি অসংখ্য কবিতা, গান, উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনা করেন।
তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ হলো মানসী, সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী। তার বিখ্যাত নাটক হলো ডাকঘর, বিসর্জন, রক্তকরবী, অচলায়তন। তার বিখ্যাত উপন্যাস হলো গোরা, নৌকাডুবি, শেষের কবিতা, চোখের বালি। তার রচিত গানের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যিক হিসেবে তিনি এ পুরস্কারটি লাভ করেন ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বোলপুরে শান্তিনিকেতন নামক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। তার প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি নাইট উপাধি বর্জন করে নিবিড় দেশপ্রেমের পরিচয় দেন।
১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট, বাংলা ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের বাইশে শ্রাবণ ৮০ বছর বয়সে মারা যান কবিগুরু।