সকাল নারায়ণগঞ্জ
বাসে পাশের সিটের যাত্রী হঠাৎ বলে উঠলেন- ‘রাস্তাঘাটের যে কী অবস্থা, ভাই!’ এরপর এটাসেটা নিয়ে গল্প জুড়ে দিলেন। অল্প সময়েই সহযাত্রীর সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠল। একপর্যায়ে তিনি ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতার কাছ থেকে ঝালমুড়ি বা জলপাইয়ের আচার কিনলেন। তার অনুরোধে সহযাত্রীও খেলেন সেই খাবার। তারপর আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরল, নিজেকে আবিস্কার করলেন হাসপাতালের বিছানায়। সঙ্গে থাকা টাকা-ফোন খোয়া গেছে। আর অবশ্যই খোঁজ নেই পাশের সিটের সেই যাত্রীর।
অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খোয়ানো অনেকের গল্প এমনই। তবে তাদের কৌশল কিন্তু খুব সরল নয়। যাত্রী সেজে গণপরিবহনে উঠে বসে থাকা লোকটি যেমন এই চক্রের সদস্য, তেমনি ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাও তার সহযোগী। পাশাপাশি তাদের সহযোগিতার জন্য আশপাশেই থাকে আরও কয়েক সদস্য। কোনো কারণে যদি মূল ভূমিকায় থাকা সদস্য ধরা পড়ে, তখন অন্যরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। সেই প্রক্রিয়াও চমকপ্রদ। অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের পুলিশে সোপর্দ করার কথা বলে তারা চড়-থাপ্পড় মেরে ভিড় থেকে বের করে আনে। তারপর সুযোগ বুঝে চম্পট।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের জ্ঞান তথা কৌশলের কমতি নেই। একেক এলাকায় তারা একেক পদ্ধতি অনুসরণ করে। ঈদুল আজহা সামনে রেখে তারা এখন ঘরমুখো মানুষকে টার্গেট করছে। এ জন্য তারা মূলত বাস টার্মিনাল, সদরঘাট ও রেলস্টেশন ঘিরে তৎপর হয়ে উঠেছে। সেইসঙ্গে তাদের আরেকটি বড় জায়গা হলো কোরবানির পশুর হাট। সেখানে পশু ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া তাদের লক্ষ্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভালো মানুষ বা পরোপকারী সেজে টার্গেট ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলে তারা।
ঈদ সামনে রেখে অজ্ঞান-মলম পার্টি বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এ সময় সজাগ থাকে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, অজ্ঞান-মলম পার্টির অন্যতম অস্ত্র হলো বিশেষ ধরনের হালুয়া। এতে উচ্চমাত্রার চেতনানাশক মেশানো থাকায় খুব দ্রুত মানুষ অচেতন হয়ে পড়ে। পরের কয়েক ঘণ্টায় তার জ্ঞান ফেরার কোনো সুযোগই থাকে না। আবার মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ মেশানো হালুয়া বা অন্যান্য খাবার খেয়ে ভুক্তভোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। যারা বেঁচে যান, তাদেরও শরীরের কোনো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া এক ধরনের মলম ও মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করে তারা। ওই মলম কারও চোখে লাগালে অন্তত আধাঘণ্টা তিনি কিছু চোখে দেখেন না। এক্ষেত্রেও দৃষ্টিশক্তি হারানোর মতো ঘটনা ঘটে।