বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আজও একই রকম প্রাসঙ্গিক।’ শুক্রবার কোলকাতার ক্যাথেড্রাল এভিনিউতে একাডেমি অফ ফাইন আর্টসে ‘ট্যাগোর এন্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট: সাম রেলেভেন্ট ইন্টারফেসেস’ শিরোনামে একটি একটি সভায় বিশেষ বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে, শুক্রবার সকালে ড. আতিউর হেরিটেজ গ্রুপ অপ ইনস্টিটিউশনস-এ সেখানকার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করেন। হেরিজেট একাডেমির পরিচালক এবং বন্ধন ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক অরূপ সিনহার সভাপতিত্বে ঐ অনুষ্ঠানে ড. আতিউর বাংলাদেশের আর্থিক সেবা খাতের শীর্ষ ব্যক্তি হিসেবে তার নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। আলোচনায় কিভাবে তিনি গভর্নর থাকা কালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্বে বাংলাদেশে একটি ব্যাপকভিত্তিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অভিযান বাস্তবায়িত হয়েছে এবং তার ফলে বিশ্ব-অর্থনৈতিক মন্দার মুখেও দেশের প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ানো সম্ভব হয়েছে তা তুলে ধরেন।
এরপর ড. আতিউর কোলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটিতে ‘রবীন্দ্র ভাবনায় পল্লী উন্নয়ন’ শিরোনামে একটি বিশেষ বক্তৃতা করেন। সেখানে বিশ্ব-ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার এবং এশিয়াটিক সোসাইটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক অলোক ভৌমিকসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবি উপস্থিত ছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ প্রান্তিক কৃষক সমাজের বঞ্চনা নিয়ে কতটা ভাবতেন এবং তাদের দুর্দশা মোচনের জন্য যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন সেগুলো নিয়ে এ বক্তৃতায় বিস্তারিত আলোচনা করেন ড. আতিউর। এ সময় তিনি বলেন, ‘রবি ঠাকুর ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী জমিদার। কারণ কৃষির আধুনিকায়ন, বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ বৃদ্ধির জন্য তিনি বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলেন।’
এর পর বিকালে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজ ড. আতিউর রহমানের একটি বিশেষ বক্তৃতা আয়োজন করে। সেখানে তিনি ‘ট্যাগোর’স থটস অন সাসটেইনেবিলিটি এন্ড বাংলাদেশ’স ইনোভেটিভ ফাইনান্সিয়াল ইনক্লুশন এক্সপেরিয়েন্স’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. শশীকুমার।
নিবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. আতিউর বলেন, ‘প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে রবীন্দ্রনাথ বহুকাল আগে যে মহৎ উদ্যোগগুলো নিয়েছিলেন সেগুলোকেই সময়োপযোগী করতে প্রয়োজনীয় রদবদল করে বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশে ব্যাংকের এসব কর্মসূচির ফলে দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির এক নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে।’
পরে কোলকাতার ক্যাথেড্রাল এভিনিউতে একাডেমি অফ ফাইন আর্টসে ‘ট্যাগোর এন্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট: সাম রেলেভেন্ট ইন্টারফেসেস’ শিরোনামে আরও একটি বিশেষ বক্তৃতা করেন ড. আতিউর। ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাটিজের উদ্যোগে এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক শর্মিলা ব্যানার্জি এবং সেখানে উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন গবেষক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং ব্যাংক কর্মকর্তা। সেখানে বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার সম্মিলনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন, এবং দুই দুটি বিশ্বযুদ্ধের বেদনাদায়ক সময়গুলোও তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। এ কারণেই আর্থসামাজিক রূপান্তর প্রসঙ্গে তার চিন্তা ও কাজগুলো আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। আজকের বিশ্বে যখন মূল্যবোধের অবক্ষয় একটি প্রধানতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে আসছে এবং টেকসই উন্নয়ন ভাবনাগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছে তখন রবীন্দ্রনাথের দর্শন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে পারি।’