সকাল নারায়ানগঞ্জ অনলাইন ডেস্ক: রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হলে দেশ পিছিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। লক্ষ্য আদায়ে কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। এ বাজেটে দাঁড়ি-কমা যা আছে, তা মেইনটেন করা হবে বলেও জানান তিনি।
রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে রাজস্ব সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সভায় দেশের সব ভ্যাট, কাস্টমস ও আয়কর কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।
সভার শুরুতে রাজস্ব ঘাটতির ব্যাখ্যা দেন আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের কর্মকর্তারা। জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে না পারলে দেশ পিছিয়ে যাবে। রাজস্ব ঘাটতির যেসব কারণ দেখানো হয়েছে, সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, বিবেচনা করাও ঠিক হবে না।
এনবিআরের পরামর্শেই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি সিস্টেমের কারণে আদায় কম হয়ে থাকে সেটা বিবেচনা করা হবে। আগামীতে কোনো অজুহাত শোনা হবে না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা কর দেয়ার যোগ্য কিন্তু কর দিচ্ছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। করযোগ্যদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। অনেকে বিদেশে গিয়ে একদিনে যে কেনাকাটা করেন তার দশ ভাগের এক ভাগ কর দিত তাহলে দেশ আরও ভালো চলত।
কর্মকর্তাদের বাজেটের বই ভালো করে পড়ার পরামর্শ দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বাজেটে দাঁড়ি-কমা যা আছে, তা বাস্তবায়ন করা হবে। যদি কোনো সমস্যা থাকে তা আগামী বছর পরিবর্তন করা হবে। কারণ ব্যবসায়ী, জনসাধারণ সবাই একে স্বাগত জানিয়েছে।
গত বছর ৫৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি ছিল। ইটস নট অ্যা মেটার অফ জোক। এ টাকার ওপর ভিত্তি করেই কিন্তু অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। বাজেট যখন আসে, তখন বছরের প্রথম দিন থেকেই খরচ শুরু হয়ে যায়। সেটা কিভাবে পূরণ করব।’
তিনি বলেন, এনবিআর যদি স্বচ্ছ হয়, তাহলে বাংলাদেশের সব খাত স্বচ্ছ হয়ে যাবে। অনেকে ভয়ে ট্যাক্স দিতে আসে না, আসলেও ট্যাক্স নিতে চায় না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, এ বছরে চট্টগ্রাম কাস্টমসকে ৬৩ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য দেয়া হয়েছে, যা মোট শুল্ক আয়ের ৬৮ শতাংশ। অর্থবছরের শুরুতে জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হলেও আগস্টে কোরবানির ঈদ ও ৫ দিনের টানা বৃষ্টির কারণে বন্দর থেকে মালামাল খালাস হয়নি। তাই রাজস্ব আদায় কমেছে।
তাছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টমস দিয়ে উচ্চ শুল্কের পণ্য আমদানির পরিমাণ কমেছে। পাশাপাশি চলতি বাজেটে শুল্ক কাঠামো পুনর্বিন্যাসও শুল্ক কম আদায়ের কারণ।
ভ্যাট বাস্তবায়ন অনুবিভাগের সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, ভ্যাট খাতে ঘাটতির বড় কারণ সিগারেটের কর কাঠামো পুনর্বিন্যাস ও আগাম কর। এ কারণে দুই মাসে ভ্যাটের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ শতাংশ। যদি গত বছরের মতো সিগারেট খাত থেকে রাজস্ব আদায় করা যেত এবং আগাম কর ফেরত দিতে না হতো তাহলে ভ্যাটে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতো।
ইএফডি মেশিন স্থাপন ও অটোমেশন করা গেলে ভ্যাট খাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে। কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের সদস্য কালিপদ হালদার বলেন, বর্তমানে টিআইএনধারীর সংখ্যা ৪৪ লাখ ২৭ হাজার।
আগামী ৩ বছরের মধ্যে এটি ১ কোটিতে উন্নীত করা হবে। সব টিআইএনধারী যাতে রিটার্ন জমা দেন সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ডিসেম্বর থেকে আয়কর আদায়ের গতি আরও বাড়বে। শিল্প খাতে কর অব্যাহতি ও অবকাশ সুবিধার কারণে আয়কর আদায় কমার কারণ বলে মন্তব্য করেন তিনি। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, জরিপের মাধ্যমে নতুন করদাতা খুঁজে বের করা হয়েছে।
এদের টিআইএন দেয়া হয়েছে এবং রিটার্ন জমা দিতে বলা হয়েছে। কর কমিশনারদের এ ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারণ টিআইএনধারী ও রিটার্ন জমাদানকারীদের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। এ বছর ৩০ লাখ রিটার্ন জমা পড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ভ্যাট আদায় বাড়াতে ২০ হাজার ইএফডি মেশিন আমদানিতে দুটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আরও ৫ লাখ ইএফডি মেশিন আনা হবে। সামগ্রিকভাবে এনবিআরের জনবল বাড়াতে অস্থায়ী ভিত্তিতে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান আছে।