আজ রোববার (৩১ জুলাই) পহেলা মহরম। হিজরি ১৪৪৩ সনকে বিদায় জানিয়ে শুরু হলো ১৪৪৪ হিজরি বর্ষের পথচলা। বাংলাদেশের আকাশে শনিবার সন্ধ্যায় মহরম মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় আগামী ৯ আগস্ট সারা দেশে পবিত্র আশুরা উদযাপিত হবে।
বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিজরি সনের শুভসূচনা হয়। তাই মুসলমান ও আরব বিশ্বে হিজরি নববর্ষ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে দাপ্তরিক কাজকর্ম হয় আরবি ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে।
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ত্যাগ ও কোরবানির ঐতিহাসিক স্মৃতি স্মারক হিজরি (আরবি) সন। আল্লাহর নির্দেশে বিশ্বনবী দিন প্রচারে প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা ত্যাগ করে ইয়াসরিবে (মাদিনা মোনাওয়ারায়) হিজরত করেন, যাকে কেন্দ্র করেই হিজরি সন।
বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষে আমাদের দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন তথা কর্মসূচি পালিত হয়ে থাকে। আরবি নববর্ষের অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য থাকা সত্ত্বেও উল্লেখ করার মতো কোনো কর্মসূচি পালন করা হয় না বললেই চলে। হিজরি বছরের শেষ মাস এবং শুরুর মাস অনেক মর্যাদা ও ফজিলতের মাস। তাই এ হিজরি বছরের শেষ এবং নতুন বছরের প্রথম রাত ও দিন বিগত দিনের গোনাহ মাফ এবং আগামী দিনের কল্যাণ লাভের এক মর্যাদাপূর্ণ সময়।
ইতিহাসের এক জ্বলন্ত সাক্ষী এই মহরম মাস। ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্রপাত হয় এ মাসে। শুধু উম্মতে মোহাম্মাদি-ই নয়, বরং পূর্ববর্তী অনেক উম্মত ও নবির অবিস্মরণীয় ঘটনা সংঘটিত হয় এ মাসে। মহরম অর্থ মর্যাদাপূর্ণ। মহরম সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা ১২। যেদিন থেকে তিনি সব আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে চারটি হলো সম্মানিত মাস। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তোমরা এই মাসগুলোর সম্মান বিনষ্ট করে নিজেদের প্রতি অত্যাচার কোরো না।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ৩৬)।
অনেকেই আশুরার ঐতিহ্য বলতে রসুলুল্লাহ (স.)-এর প্রিয়তম দৌহিত্র হজরত হুসাইন (রা.)-এর শাহাদত ও নবীপরিবারের কয়েক জন সদস্যের রক্তে রঞ্জিত কারবালার ইতিহাসকেই বুঝে থাকে। বাস্তবতা হলো, হজরত হুসাইন (রা.)-এর মর্মান্তিক শাহাদতের ঘটনার অনেক আগে থেকেই আশুরা তাৎপর্যপূর্ণ ও রহস্যঘেরা দিন। কারণ কারবালার যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৬১ হিজরির ১০ মহরম। তারও বহু আগে ১০ মহরম হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ও তার সাথিদের ফেরাউন ও তার সৈন্যদের থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘটনা; যেখানে দরিয়ায় রাস্তা বানিয়ে আল্লাহ তাআলা তাদের নিরাপদে পৌঁছে দেন। এই রাস্তা দিয়ে অতিক্রম করার সময় ফেরাউন ও তার সৈন্যদের দরিয়ায় ডুবিয়ে ধ্বংস করার ঘটনা ঘটে ১০ মহরম।
ইসলাম ও মুসলমানের জন্য এ মাসের রয়েছে অনেক শিক্ষণীয় ও পালনীয় বিষয়। তাইতো এ মাসের ৯, ১০ ও ১১ তারিখে রোজা রাখা উত্তম।