সকাল নারায়ণগঞ্জ অনলাইন ডেস্ক:
ইসলাম মা-বাবাকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করেছে। মা-বাবার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা তিনি (আল্লাহ) ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করবে না এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। তাদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের বিরক্তিসূচক কিছু বল না এবং তাদের ভর্ৎসনা কর না। তাদের সঙ্গে কথা বল সম্মানসূচক নম্রভাবে।’ (সূরা বনি ইসরাইল ২৩)।
মা-বাবার প্রতি সন্তানদের বিনয়াবনত থাকার এবং মা-বাবার জন্য দোয়া করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থাক এবং বল হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করুন, যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছিলেন।’ (সূরা বনি ইসরাইল ২৪)।
সন্তানকে জন্মদান থেকে শুরু করে লালন-পালন করে বড় করা পর্যন্ত কষ্টগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সঙ্গে এবং প্রসব করে তার গর্ভধারণ ও দুধ ছাড়ানোর সময়কাল ত্রিশ মাস, ক্রমে সে পূর্ণ শক্তিপ্রাপ্ত হয় এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হওয়ার পর বলে হে আমার রব! আপনি আমাকে সামর্থ্য দিন, যাতে আমি আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার প্রতি ও আমার মাতা-পিতার প্রতি আপনি যে অনুগ্রহ করেছেন, তার জন্য এবং যাতে আমি সৎকাজ করতে পারি, যা আপনি পছন্দ করেন; আমার জন্য আমার সন্তানসন্ততিদের সৎকর্মপরায়ণ করুন, আমি আপনারই অভিমুখী হলাম এবং আত্মসমর্পণ করলাম।’ (সূরা আহক্বাফ ১৫)।
কুরআনের অসংখ্য জায়গায় আল্লাহতায়ালা বারবার মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এর দ্বারা বোঝা যায়, মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। যেমন আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা আল্লাহরই ইবাদত কর এবং তার সঙ্গে কোনো বিষয়ে অংশীদার স্থাপন কর না এবং মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর।’ (সূরা নিসা ৩৬)।
রাসূল (সা.) মা-বাবার মর্যাদা সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেছেন। যেমন হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! মানুষের মধ্যে আমার সদ্ব্যবহারের সর্বাপেক্ষা হকদার ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। সে বলল তারপর কে? তিনি বললেন, তারপরও তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপর তোমার পিতা।’ (সহিহ মুসলিম ৬৩৯৪)।
রাসূল (সা.) জিহাদে অংশগ্রহণ করার চেয়ে মা-বাবার খেদমতকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। যেমন হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি নবি (সা.)-এর কাছে এলো। এরপর সে তাঁর কাছে জিহাদে অংশগ্রহণের অনুমতি চাইল। তখন তিনি বললেন, তোমার মাতা-পিতা কি জীবিত আছেন? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তাদের উভয়ের (খেদমত করে) সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা কর।’ (সহিহ মুসলিম ৬৩৯৮)।
বৃদ্ধাবস্থায় মা-বাবার খেদমত করার ফজিলত যে কত বেশি তা উপলব্ধি করা যায় রাসূলের এ হাদিস থেকে। হজরত আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নাক ধূলিমলিন হোক, আবারও নাক ধূলিমলিন হোক, আবারও নাক ধূলিমলিন হোক। জিজ্ঞেস করা হলো, কোনো ব্যক্তির, হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে বার্ধক্যাবস্থায় পেল অথচ সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না।’ (সহিহ মুসলিম ৬৪০৪)।
সন্তানের জন্য মা-বাবা আল্লাহর দেওয়া অনেক বড় নিয়ামত। প্রতিটি সন্তানের উচিত হবে মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, মা-বাবার খেদমত করে জান্নাতের যাওয়ার পথ সুগম করার চেষ্টা করা। মা-বাবাকে সর্বোচ্চ সম্মান-মর্যাদার আসনে আসীন করে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের সঙ্গে রবের সন্তুষ্টি অর্জনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা।
লেখক : ছড়াকার ও প্রাবন্ধিক