সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
সিদ্ধিরগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনায় কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনাকে প্রধান আসামী করে মোট ৫২ জনের নামে একটি মামলা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে করোনা ইস্যুতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এক ভাড়াটিয়ার পক্ষে বিচারে রায় দেয়ায় ক্ষুব্ধ বাড়িওয়ালী (দিনার খালা) স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে কাউন্সিলর দিনার কার্যালয়ে ঢুকে তার উপর অতর্কিতে হামলা চালায়। এ সময় এ জনপ্রতিনিধিকে লাঞ্ছিত ও শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে বলে অভিযোগে জানা যায়।
এ বিষয়ে ওইদিন রাতেই দু’পক্ষ থানায় পৃথক পৃথক দু’টি অভিযোগ দায়ের করেন। পরদিন বুধবার ছাত্রলীগ কর্মিরা নিজেরাই বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও এমপি শামীম ওসমানের ছবি ভাঙচুর করে নাটকীয়ভাবে তা কাউন্সিলর দিনা ও তার সেচ্ছাসেবক টিমের সদস্যদের দায়ী দেখিয়ে মামলা দিতে চাইলেও থানাপুলিশ সেই মামলা নেয়নি। বরং এর পরেরদিন বৃহস্পতিবার সকালে ছাত্রলীগ কর্মীদের মারধরের ঘটনায় একটি মামলা রুজু করেন।
তবে কাউন্সিলর দিনার করা লিখিত অভিযোগে মামলা নেয়নি থানা পুলিশ। ঘটনার বিবরনে জানা গেছে, সোমবার (১৬ জুন) নাসিক সিটি কর্পোরেশনের ৮নং ওয়ার্ডের বৌ-বাজার এলাকায় করোনা ইস্যুতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এক ভাড়াটিয়ার বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে না পারা এবং বাসা ছেড়ে না দেওয়া নিয়ে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনা ও তার খালার সাথে বাদানুবাদ হয়। দিনা এসময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে ভাড়াটিয়ার পক্ষে রায় দেন।
এরই প্রেক্ষিতে ক্ষিপ্ত হয়ে দিনার খালাত ভাই রুবেল (বাড়িওয়ালার ছেলে) ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফ হাসান অর্নব এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামসহ অন্যরা কাউন্সিলর দিনার অফিসে গেলে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কাথা কাটাকাটি এবং পরে তা মারামারি পর্যন্ত গড়ায়। এঘটনায় উভয় পক্ষই ওই রাতেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দুটি পৃথক অভিযোগ দায়ের করেন। নারী কাউন্সিলর তাকে মারধর ও স্বর্ণালংকার এবং মোবাইল চুরি অভিযোগ করেন
অপরদিকে ছাত্রলীগও তাদেরকে মারধর ও রক্তাক্ত যখম এবং চুরির অভিযোগ করে। পরবর্তীতে মঙ্গলবার দুপুরে ও বিকেলে দিনা ও ছাত্রলীগ আলাদা আলাদা সংবাদ সম্মেলন করেন। এদিকে বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) সকালে ছাত্রলীগের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় কাউন্সিলর দিনা এবং তার ভাই দিপুসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও মামলায় আরো ৩০জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়। কিন্তু কাউন্সিলর দিনার করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোন মামলা নেয়নি পুলিশ সেটা জানে। এই বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ফারুক জানান, নারী কাউন্সিলর ও ছাত্রলীগের মারামারির ঘটনায় দু’পক্ষই অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু আমরা তদন্ত করে ছাত্রলীগকে মারধরের বিষয়টির সত্যতা পেয়েছি। কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনা জানান, আমি মামলা করবো না।
আমি ন্যায় বিচারের আশায় আছি। একজন অসহায় ভাড়াটিয়াকে সহযোগিতা করতে গিয়ে আমার আত্মীয়ের সাথে যে সামান্য কথা কাটাকাটি হয়েছে, সেখানে স্থানীয় ছেলেদের আসার কোনো কারণ নেই। তারপরও ওরাই এসে আমার স্বামী ও ভাই সহ আমার উপর হামলা করল, আবার ওরাই মামলা করল আমার বিরুদ্ধে।
অথচ আমি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এমপি শামীম ওসমান এর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে তার আশ্বাসে তার ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় থেকে মামলা করিনি। আমি এখনও শুধুমাত্র এমিপ সাহেবের বিচারের অপেক্ষায় আছি। এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বুধবার দিবাগত রাত ১২টায় আটক করা ২ জন বৃহস্পতিবার বিকেলে আমান ও দুলাল নামে দুইজনের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছে আদালত।
এছাড়া প্রধান আসামী কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনা মামলার কারণে পালিয়ে বেরানোয় সরকারি ত্রাণ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে করোনাভাইরাসের কারণে আর্থিকভাবে দুর্বল ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের অসহায় দরিদ্র অসংখ্য পরিবার। পাশাপাশি কাউন্সিলর দিনার সহযোগিতায় স্বাস্থ্যসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে অনেক গর্ভবতি অসহায় দরিদ্র নারী ও তাদের পরিবার।