সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
স্টাফ রিপোর্টার (আশিক)
বর্ষাকাল এখনো শুরু হয়নি। তবে এরই মধ্যে বর্ষার আগমনী বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই ঝড়-ঝঞ্ঝার সঙ্গে ভারী বৃষ্টি লেগেই রয়েছে। আবহাওয়াবিদেরা জানান, গত বছর বর্ষা (মৌসুমি বায়ু) এসেছিল কিছুটা দেরি। তবে স্বাভাবিক সময়েই বর্ষাকাল আসবে।
আগে আগমনী বার্তা পাওয়া না গেলেও এবার বেশ আগে থেকেই বর্ষাকাল সেটির জানান দিচ্ছে। বাংলাদেশজুড়ে বিস্তৃতি ঘটলেই বোঝা যাবে এবারের বর্ষাকালের চরিত্রটি কেমন হবে।
বাংলাদেশের মানুষ বর্ষাকাল বলতে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসকেই হিসাবের মধ্যে নিয়ে আসে। অর্থাৎ, মধ্য জুন থেকে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত পুরোদস্তুর বর্ষাকাল। কিন্তু আবহাওয়াবিদদের কাছে বর্ষাকালের হিসাব বেশ দীর্ঘ। তাঁদের কাছে বঙ্গদেশে বর্ষাকাল শুরু হয় জুন মাসে। ইতি ঘটে সেপ্টেম্বর মাসে। সব মিলিয়ে চারটি মাস। এই চার মাসের মধ্যে বেশি বৃষ্টি হয় জুনের শেষ দিক থেকে শুরু করে পুরো জুলাই মাসে।
তবে কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে বর্ষাকাল শুরুর আগে কখনো বৃষ্টি হচ্ছে, কখনো বর্ষার পর বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু আষাঢ়-শ্রাবণের সেই মুষলধারার বৃষ্টি আর ঝরছে না। বর্ষাকালে বৃষ্টির পরিমাণও কমে গেছে। এতটাই কমেছে যে সেটি স্বাভাবিকের চাইতে গড়ে প্রায় ২৫ ভাগ কম ছিল।
এবার বর্ষাকাল তার আগমনী বার্তা দিচ্ছে আগেভাগেই। যেমনটি গেল কয়েক বছর ছিল না। এবার মে মাস শেষার্ধ থেকেই প্রকৃতি বর্ষার সাজে সেজেছে। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ আঘাত হানার পর থেকে ঝড়-বৃষ্টি লেগেই আছে। প্রতিদিন একবার নয়, একাধিক বার ভারী বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। গাণিতিক হিসাবে মে মাসে তো স্বাভাবিকের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। তবে এতে ঘূর্ণিঝড় আম্পানেরও বড় অবদান ছিল বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টি খুলনা বিভাগে আঘাত হানায় সেখানে সবচেয়ে বৃষ্টি বেশি হয়েছে। কিন্তু মধ্যাঞ্চল ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টি বেশি ছিল। এমনকি রংপুর ও রাজশাহী বিভাগেও বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বর্ষার আগমনের আগেই আকাশে এখন থাকছে কালো মেঘের ঘনঘটা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১৭ জুন বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ু চলে আসে। ২০ জুনের মধ্যে এটি বিস্তৃত হয় দেশজুড়ে। এবার ২০২০ সালে ধারণা করা হচ্ছে, সারা দেশে মৌসুমি বায়ুর বিস্তার ঘটবে জুন মাসের প্রথমার্ধে, অর্থাৎ ১৫ জুনের আগে। গেল বছরের তুলনায় কিছুটা আগেভাগে এলেও বর্ষায় স্বাভাবিক বৃষ্টির সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। তেমনটি হলে জুন মাসে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ৩৯০ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ৫৮৯ মিলিমিটার, সিলেটে ৬৫০ মিলিমিটার, ময়মনসিংহে ৪৭৫ মিলিমিটার, খুলনায় ৩২৫ মিলিমিটার, বরিশালে ৫৩০ মিলিমিটার এবং রংপুর বিভাগে ৪৩০ মিলিমিটার বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। জুন মাসে অর্ধেকের বেশি দিনই বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে। সিলেট বিভাগে ২০ থেকে ২৬ দিন, ঢাকা, রংপুর, বরিশাল ও চট্টগ্রামে ১৫ থেকে ২০ দিন, ময়মনসিংহে ১৮ থেকে ২২ দিন এবং খুলনা বিভাগে ১২ থেকে ১৮ দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আজ শনিবার (৬ জুন) আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমরা বলেছি, এবার বর্ষাকাল (মৌসুমি বায়ু) শুরু হবে জুনের প্রথমার্ধে। আজ মৌসুমি বায়ু মিয়ানমারের আকিয়াব উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থান করছিল। এবার বর্ষার আগমনের আগে প্রকৃতির রূপ একটু অন্য রকম। কয়েক বছর ধরে বর্ষাকালের আগমনী বার্তা দিচ্ছিল না। এবার প্রচুর বৃষ্টি ঝরানোর মধ্য দিয়ে কিন্তু বর্ষার আগমনী বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। তবে বর্ষাকালের চরিত্রটি কেমন হবে, সেটি মৌসুমি বায়ু না আসা পর্যন্ত বোঝা যাবে না।’