সকাল নারায়ণগঞ্জ অনলাইন ডেস্কঃ
পটিয়ার জামিয়া প্রধান আল্লামা আবদুল হালিম বুখারি দেওবন্দের মুহতামিমের আলোচনা স্মরণ করে বলেন, ‘এ বছর আমি দারুল উলুম দেওবন্দে যাওয়ার পর মুহতামিম আমার থেকে খতমে বুখারি অনুষ্ঠান বন্ধ করার ওয়াদা নিয়েছেন। তাই এ বছর থেকে জামিয়া পটিয়ায় খতমে বুখারির কোনো অনুষ্ঠান হবে না।
উপস্থিত অন্য সবাই এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন। যেসব মুহাদ্দিস আমাদের দেশে হাদিসের বিশুদ্ধগ্রন্থ সহিহ আল বুখারির দরস দিয়ে থাকেন তারা ‘শায়খুল হাদিস’ নামে খ্যাত। যেহেতু আমাদের দেশের দাওরায়ে হাদিস ও কামিল মাদ্রাসায় খতমে বুখারির রেওয়াজ রয়েছে, তাই আমাদের দেশে শায়খুল হাদিসের সংখ্যাও বেশি।
উসুলে হাদিসের পরিভাষায় যার অন্তত তিন হাজার হাদিস সনদসহ মুখস্থ রয়েছে তাকে শায়খুল হাদিস বলা হলেও আমাদের দেশে যিনি বুখারি শরিফ পড়ান তিনিই শায়খুল হাদিস খ্যাতি পেয়ে যান। আর এ কারণেই আমাদের দেশে অসংখ্য শায়খুল হাদিস থাকলেও শায়খুল কোরআনের অস্তিত্ব নেই।
শায়খুল হাদিসের প্রয়োজন নেই আমি এ কথা বলছি না, কারণ তাদের দিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থী তৈরি হচ্ছে তবে একটি বিষয় বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে অসংখ্য শায়খুল হাদিস তৈরি হলেও মহাপবিত্র কোরআনুল কারিমের উপযুক্ত শিক্ষক বা শায়খুল কোরআন তৈরি হচ্ছে না। যে কারণে পথহারা মানুষের হৃদয়ে কোরআনের নুর পৌঁছে দেয়া যাচ্ছে না।
নবী করিম (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মূলত আল কোরআনের মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্য অমুসলিমদের সামনে তুলে ধরেছেন। এ ক্ষেত্রে আমি ড. আহমেদ দিদাতের উদাহরণ দিতে পারি। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের মাঝে শুধু কোরআনের সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন যৌক্তিকভাবে।
তিনি মহাপবিত্র কোরআনুল কারিমকে সম্বল করে পথহারা মানুষকে পথ দেখাতে পেরেছেন। তার সান্নিধ্যে যারা গিয়েছিলেন তারাই হেদায়াতের আলোয় আলোকিত হয়েছিলেন। কারণ পৃথিবীর সব আলো এক সময় অন্ধকারে ডুবে গেলেও মহাপবিত্র কোরআনুল কারিমের আলো চিরভাস্বর। কোরআনের আলোয় যারা আলোকিত হতে পেরেছেন পৃথিবীর কোনো অন্ধকার তাদের ঢাকতে পারে না।
বর্তমান পৃথিবীতে মুসলমান সম্প্রদায়কে চারপাশ থেকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যত রকম প্রচেষ্টা করা হচ্ছে- দেশে শায়খুল কোরআনের প্রচলন থাকলে এ অপশক্তির বিরুদ্ধে সিসাঢালা প্রাচীরের মতো দাঁড়াতে পারত।
মুসলিম পরিবারে যত্নের সঙ্গে কোরআনুল কারিম সংরক্ষণ করা হয়। হয় না শুধু কোরআনের শিক্ষা নিজের জীবনে প্রয়োগ করা। আপনার আমার জীবনে কোরআনের প্রয়োগ যিনি শিখিয়ে দেবেন তিনি হবেন একজন শায়খুল কোরআন। যিনি নিজে অন্ধকারমুক্ত হবেন, অন্যকে আলোর দিকে নিয়ে যেতে পারবেন।
তখনই তিনি পারবেন যখন তিনি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মতো জীবন্ত কোরআনে পরিণত হতে পারবেন। তা না হলে শুধু বাংলাদেশ কেন, সারা পৃথিবীতে ঘুষ, সুদ, ব্যভিচারসহ সব ধরনের অনাচার চলতে থাকবে। আর এ অনাচার থামাতে পারবে শুধু কোরআনের নুর। অর্থাৎ একজন শায়খুল কোরআন মানুষের অন্তরে যখন কোরআনের আলো পৌঁছে দিতে পারবেন তখন জগৎ পরিপূর্ণ আলোয় আলোকিত হবে।
লেখক : মুহাদ্দিস ও প্রাবন্ধিক