সকাল নারায়ণগঞ্জঃ

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নের নামে বিপুল অর্থ ব্যয়ে প্রকল্প হয়েছে। কিন্তু মানুষের জন্য এ সকল প্রকল্পের উপযোগিতা ছিলো অনেক কম। নতুন বাংলাদেশে আমরা নগর-গ্রামে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করে পরিকল্পনামাফিক শহরগুলোকে গড়ে তোলার একটি অঙ্গীকারের প্রত্যাশা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের রয়েছে। আজ ২৭ আগস্ট ২০২৪, সকাল ১১.০০ টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত ‘বাসযোগ্য নগরী গঠনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল টকশো’তে বক্তারা এ কথা বলেন।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ মিঠুনের সঞ্চালনায় এবং সংস্থার পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি) এর সভাপতি ড. আদিল মোহাম্মদ খান, ভূমিজ লিমিটেড এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও স্থপতি ফারহানা রশীদ, এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতি (বেলা)-এর ক্যাম্পেইনস এন্ড পলিসি কো-অর্ডিনেটর বারিশ হাসান চৌধুরী।

আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানকে বিবেচনায় না নিয়ে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যা সাধারণ জনগণকে উপকৃত করেনি। পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে সাধারণ জনগণের চাহিদার প্রতিফলন থাকা প্রয়োজন। বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে বুঝতে পারবো অবাধে নদী-খাল-জলাশয় দখল করে ফেলার কারণে আজকের এ ভয়াবহতা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এছাড়া আন্তঃ নদীতে প্রতিটি দেশেরই সমান অধিকার। কিন্তু দুর্বল পররাষ্ট্র নীতির কারণে আমরা কখনো আমাদের পানির হিস্যা বা বাঁধগুলো নিয়ে কোন প্রশ্ন করিনি। তিস্তা বাঁধ খুলে দেয়ার কারণে কুড়িগ্রাম, নীলফামারিতে বন্যা নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরণের বাঁধ কোন সমাধান নয়। গবেষণার মাধ্যমে এ সকল বাঁধের প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ করে শক্তিশালী পররাষ্ট্র নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশকেই নিরবিচ্ছিন্ন পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

ফারহানা রশীদ বলেন, বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা আমাদের অনেক বড় একটি সমস্যা। ছোট-বড় যেকোন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিটি দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যেহেতু এ সরকার বৈষম্যহীন এবং সুশাসনমূলক একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চান, সেক্ষেত্রে অন্তর্ভূক্তিমূলক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সবার চাহিদা যেন প্রাধান্য পায় তা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে শুধুমাত্র গণস্থাপনা বা গণপরিসর তৈরি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ না থেকে রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তবে সব কিছু কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি না করে ব্যক্তি আচরণ পরিবর্তনও করতে হবে। নগরে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ যত্রতত্র পলিথিন-প্লাস্টিক ফেলা। এ ধরণের আচরণ থেকে বিরত থাকলে নগরে জলাবদ্ধতা অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব।

বারিশ হাসান চৌধুরী বলেন, দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ প্রায় ছিল না বললেই চলে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের প্রথম চাওয়া জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের পথে যে বাধাগুলো আছে তা দূরীকরণ। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণে আমাদের দেশে প্রচুর আইন থাকা স্বত্বেও কোন প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়নি। আদালতের নির্দেশনা থাকার পরেও অনেক মাঠ-পার্কে মানুষের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত হয়নি। প্রচুর নদী-নালা-খাল-জলাশয় দখল হয়ে গেছে। এজন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাও জরুরি। আমাদের এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে যেন পরবর্তীতে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন জনগণের মৌলিক চাহিদা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। উন্নয়ন কার্যাবলী যেন বড় বড় প্রকল্পভিত্তিক না হয়ে জনগণের চাহিদাভিত্তিক হয়। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত থাকা প্রয়োজন। পাশাপাশি সরকারি সকল প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিমুক্ত করার বিকল্প নেই।

গাউস পিয়ারী বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ নগরকে বসবাস উপযোগী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে আমরা দেখতে পেয়েছি শুধু প্রকল্পভিত্তিক নগর উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি। জনবান্ধব শহর তৈরিতে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। নগর উন্নয়নের জন্য প্রতিটি কর্মকান্ড হবে এমন যেন প্রতিটি মানুষ এই উন্নয়ন সমভাবে উপভোগ করতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা দেশের সকল উন্নয়নে যেন সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে যুক্ত করা হয়।