বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে জনপ্রতি ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গা প্রয়োজন। সেখানে ঢাকা শহরে জনপ্রতি ০.১ বর্গমিটারেরও কম খোলা জায়গা রয়েছে।
গত ২০ বছরে ঢাকা শহর থেকে ১২৬ টি মাঠ হারিয়ে গেছে। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মাঠ-পার্ক তৈরির প্রস্তাবনা রয়েছে, তবে তা বাস্তবায়ন যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ বিষয়। শিশুসহ সকল এলাকাবাসীর খেলাধূলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টিতে এলাকার অভ্যন্তরে কম ব্যস্ত সড়কে নির্দিষ্ট সময় গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখে বা নিয়ন্ত্রণ করে গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজন কার্যকরী উদ্যোগ।
আজ ২১ জানুয়ারি ২০২৩, বিকাল ০৩:০০ টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ০১ নং ওয়ার্ডের সার্বিক সহযোগিতায় হেলথব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডা, পল্লীমা সংসদ, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), খিলগাঁও সামাজিক সংস্থা, মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশন, কারফ্রি সিটিস এলায়েন্স বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে খিলগাঁও পল্লীমা সংসদের পূর্ব পাশে (পল্লীমা সংসদ গলি) গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার বিকাল ৩.০০ থেকে ৫.০০ টা পর্যন্ত এ সড়কে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে দাবা-লুডু-ক্যারাম-দড়ি লাফ-ব্যাডমিন্টন, ছবি আঁকা, কারুকাজ শিখানোসহ বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করা হবে।
গাড়িমুক্ত সড়ক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন আয়োজনের প্রধান অতিথি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল ২ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সুয়ে মেন জো। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ০১ ওয়ার্ড এর কাউন্সিলর মাহবুবুল আলম- এর সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান এর সঞ্চালনায় আয়োজনে বক্তব্য রাখেন খিলগাঁও গাড়িমুক্ত সড়ক কার্যক্রমের সমন্বয়কারী হাফিজুর রহমান ময়না, পল্লীমা সংসদের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ মনসুর, খিলগাঁও আবাসিক এলাকা পরিবেশ রক্ষা কমিটির সমন্বয়কারী আওয়াল কামরুজ্জামান ফরিদ, বাবুল একাডেমী ও পল্লীমা বিদ্যাপীঠ এর প্রিন্সিপাল মীরা রায় এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী। আয়োজনে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল ২ এর আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু সাদাত মোঃ সালেহ, মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশনের শিক্ষার্থীসহ আরো অনেকে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল ২ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সুয়ে মেন জো বলেন, ব্যক্তিগত গাড়িকে জায়গা দিতে গিয়ে আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ গণপরিসর এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি নিজেরাই। আমরা জানি, শিশুদের খেলাধূলার জন্য এ শহরে পর্যাপ্ত মাঠ-পার্ক নেই। এলাকার অভ্যন্তরে কম ব্যস্ত রাস্তায় কিছু সময়ের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধ করে মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলে নিঃসন্দেহে এলাকাবাসী উপকৃত হবেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ০১ ওয়ার্ড এর কাউন্সিলর মাহবুবুল আলম বলেন, শিশুরা খেলাধূলার সুযোগ পেলে তাদের মস্তিষ্ক সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে সুষ্ঠু মেধাবিকাশ ঘটে।
পাশাপাশি তাদের মধ্যে এককেন্দ্রীক ও নেতিবাচক মনোভাব গড়ে ওঠে না। গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজনের মাধ্যমে বাড়ির কাছে খেলাধূলার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে, যা এলাকাবাসীর খেলাধূলা ও সামাজিকীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। আমরা খিলগাঁও এর আরো তিনটি সড়কে গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজনের উদ্যোগ নিচ্ছি।
খিলগাঁও গাড়িমুক্ত সড়ক কার্যক্রমের সমন্বয়কারী হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, খিলগাঁও এলাকার একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এলাকাভিত্তিক সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা গাড়িমুক্ত সড়ক কার্যক্রমটি শুরু করেছি। এর মাধ্যমে আমরা খেলাধূলার সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি মানুষকে এ বার্তা পৌঁছে দিতে চাই, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ কতটা জরুরি। ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে বাড়ছে যানজট, দূষণ, দূর্ঘটনা, কমছে গণপরিসর। সড়কের মত গুরুত্বপূর্ণ গণপরিসরে মানুষের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের এ আয়োজন।
পল্লীমা সংসদের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ মনসুর বলেন, শিশুরা আমাদের ভবিষ্যত, তাই তাদের ভালো রাখার দায়িত্বও আমাদের। শিশুদের ঘরবন্দী রেখে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের দিকে ধাবিত না করে প্রতিটি এলাকায় কারফ্রি স্ট্রিটের মতো আয়োজন করে তাদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া প্রয়োজন। খিলগাঁও আবাসিক এলাকা পরিবেশ রক্ষা কমিটির সমন্বয়কারী আওয়াল কামরুজ্জামান ফরিদ বলেন, গাড়িমুক্ত সড়কের মত আয়োজন এলাকাবাসীর মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে তুলে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতেও কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
বাবুল একাডেমী ও পল্লীমা বিদ্যাপীঠ এর প্রিন্সিপাল মীরা রায় বলেন, বর্তমানে অসংক্রামক রোগ আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষত শিশুরা বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরা শিশুদের বিকাশ নিয়েই কাজ করি। গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজন শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের মাধ্যমে তাদের অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি হ্রাস করবে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, ২০১৬ সাল থেকে প্রথম বাংলাদেশে সরকারিভাবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন হয়ে আসছে। বর্তমানে রায়েরবাজার ও মোহাম্মাদীয়া হাউজিং সোসাইটিতে গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজিত হচ্ছে।
আমাদের শহরে শিশুদের খেলাধূলার যথেষ্ট সুযোগ নেই। এ ধরণের কার্যক্রম শিশুদের বিকাশে ভূমিকা রাখবে এবং তাদের মধ্যে নের্তৃত্বের বিকাশ ঘটবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণের লক্ষ্যে ওয়ার্ডভিত্তিক গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজনে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের আহ্বান জানাই।