জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক, ভাষা সৈনিক ও স্বাধীনতার মরোণত্তর পদকে ভূষিত একেএম শামসুজ্জোহার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মরহুমের পরিবার ও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
এ কে এম শামসুজ্জোহা ছিলেন আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, গণ পরিষদের সদস্য ও স্বাধীনতা পরবর্তী জাতীয় সংসদ সদস্য। তিনি ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা মরহুম খান সাহেব ওসমান আলীও ছিলেন একজন ভাষা সৈনিক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং সাবেক এমএলএ। ঐতিহ্যবাহী এই পরিবারের আদি নিবাস নারায়ণগঞ্জের ‘বায়তুল আমান ভবন’ আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার বীজ বপন করা হয়েছিল।
মহান ভাষা আন্দোলনের সময় এই বায়তুল আমান ভবনে তৎকালীন পুলিশ প্রবেশ করে ওসমান পরিবারের সদস্যদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীতেও উঠে এসেছে ভাষা আন্দোলনে এই বায়তুল আমান ভবন ও ওসমান পরিবারের ত্যাগের কথা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের শরণার্থী শিবিরে মরহুম সামসুজ্জোহা ‘ত্রাণবন্ধু’ নামে পরিচিত ছিলেন।
এ কে এম শামসুজ্জোহা সর্বপ্রথম ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং বাংলাদেশ বেতারের মাধ্যমে বিজয়ের বার্তা প্রচার করে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্ত থাকার আহবান জানান। ওই দিন তিনি বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ পাক সেনাদের হাতে আটক বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের মুক্ত করতে গিয়ে পাক সেনার গুলিতে বিদ্ধ হন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জের একটি সুধী সমাবেশে সেই ঘটনাটি নিজ মুখে বর্ণনা করেছিলেন। মহান জাতীয় সংসদেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের ত্যাগ-তীতিক্ষার কথা স্মরণ করে বক্তব্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীকে গর্বিত করেছেন। পাশাপাশি গত বছরের ১০ অক্টোবর বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান সেতু উদ্বোধনের সময়ও ওসমান পরিবারের নানা অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শামসুজ্জোহার বড় ছেলে সাবেক এমপি নাসিম ওসমান বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট নবপরিণীতা বধূকে রেখেই প্রতিরোধ যুদ্ধে যোগ দেন। এরপর শামসুজ্জোহাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জাতীয় ৪ নেতার হত্যাযজ্ঞের সময় তিনি ও শহীদ জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী একই সেলে বন্দি ছিলেন।
শামসুজ্জোহা ছিলেন ঐ কলঙ্কিত ইতিহাসের অন্যতম স্বাক্ষী। প্রয়াত শামসুজ্জোহার মেঝো ছেলে বিএমইএ’র সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান এমপি ও ছোট ছেলে একেএম শামীম ওসমান এমপি একাধিকবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় প্রয়াত শামসুজ্জোহাকে ২০১২ সালে স্বাধীনতা পদক (মরণোত্তর) এ ভূষিত করা হয়। শামসুজ্জোহার স্ত্রী রত্নগর্ভা নারী নাগিনা জোহাও ছিলেন ভাষা সৈনিক। সালের ৭ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।
একেএম শামসুজ্জোহার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মরহুমের পরিবার ও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করবে। সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নে সামসুজ্জোহা এম.বি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া রবিবার দিনব্যাপী পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, শোক র্যালি, কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও জিয়ারত করা হবে। পাশাপাশি মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে চাষাড়া হীরা মহলে বাদ আছর একেএম শামসুজ্জোহা ও প্রয়াত বেগম নাগিনা জোহার রুহের মাগফেরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।