কেউ চিকিৎসক কিংবা সংসদ সদস্য। কেউ আবার আবার বাংলাদেশ সরকারের যুগ্ম সচিব। তারপরেও যেন সকলেই ফিরে এসেছেন শৈশবে।
প্রিয় শিক্ষককে সামনে পেয়ে সকলেই শ্রদ্ধা করছেন। সম্মান করছেন শৈশবের মতো করেই।
নারায়ণগঞ্জের অন্যতম বিদ্যাপিঠ বিবি মরিয়ম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীতে রোববার এমন চিত্র চোখে পরে এই প্রতিবেদকের। সেই অনুষ্ঠান থেকে প্রিয় শিক্ষককে দেওয়া হয় সম্মাননা।
স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা জানান, ‘আমার মতো অনেকেই এই স্কুলে পড়েছে। এখন সকলেই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু স্কুল প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে শিক্ষকদের সামনে দাঁড়াতেই নিজের শৈশবে ফিরে গেছি। এক মুহুর্তের জন্য মনে হয়েছে, আমি এখনও এই স্কুলেই পড়ি।’
নারায়ণগঞ্জের ঈশা খাঁ রোডে ১৯৪৮ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি দান করেন পাট ব্যবসায়ী আবদুর রহমান ভূঞা নামের এক ব্যক্তি। তার দান করা সেই জমিতে তত্বকালিন মহাকুমা প্রশাসকের নাম অনুসারে পশ্চিম পাকিস্তানী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়ার জন্য ১৯৪৯ সালে তৈরি করা হয় ‘রহমতুল্লাহ একাডেমি’। তখন উর্দুভাষী ছেলে মেয়ে এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল। দীর্ঘ ২২ বছর স্কুলটি পরিচালনার পরে পাকিস্তান সরকারের পতনের মধ্যদিয়ে ১৯৭০ সালে রহমতুল্লাহ একাডেমির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে রহমতুল্লাহ একাডেমির পরিত্যক্ত ভবনে যাত্রা শুরু হয় ‘বিবি মরিয়ম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের’। সেই থেকে সুনামের সাথে এখনও এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
রোববার ছিল বিবি মরিয়ম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী। দিনটি উপলক্ষে গত ৫০ বছরে প্রতিষ্ঠানটি থেকে পড়ালেখা করা শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়েছেন। তারা এখন সমাজের নানা ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। কেউ হয়েছেন চিকিৎসক, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, বাংলাদেশ সরকারের যুগ্ম সচিব, এমপি কিংবা দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতি। তাদের সকলের অংশ গ্রহণে সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবটি পরিনত হয়েছে নবীন প্রবীনের মিলন মেলায়। অনেকে দীর্ঘ দিন পর প্রিয় বন্ধু-বান্ধবী কিংবা শিক্ষককে কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠেছে। গল্প আর কথায় চলে আসছে পূরণ দিনের স্মৃতি। দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে প্রিয় মানুষ গুলোর সাথে তুলে রাখছেন ছবি ও সেলফি।
সকাল সাড়ে ৮টায় আনন্দ র্যালীর মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে অনুষ্ঠান। এরপর পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত ও গীতাপাঠ, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে নিরবতা পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টায় সাবেক শিক্ষকদের সংবর্ধনা প্রদান, সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয় আলোচনা পর্ব। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে র্যাফেল ড্র ও খেলা হয়। বিকাল সোয়া ৪টা থেকে শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পর্ব। সেখানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘চিরকুট’ তাদের গান পরিবেশন করেন।
বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও নারায়ণগঞ্জের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হোসনে আরা বাবলী বলেন, আমি এই স্কুলে পড়েছি। অনেকের সাথেই পরিচয় হয়েছে। অনেকেই সমাজের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই আয়োজনের মধ্যদিয়ে তাদের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটেছে। আমাদের সাথেও তাদের সর্ম্পকেও তাদের জানা হয়েছে। এই আয়োজন আমাদেরকে নবীন ও প্রবীনদের মধ্যে একটি বন্ধন সৃষ্টি করেছে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী, স্কুলের সভাপতি ও মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘শিক্ষকরা আসবে, যাবে। স্কুলের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে; এটাই তাদের কাজ। কিন্তু আমরা যারা বিবি মরিয়ম স্কুলের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী আছি। আমাদের উচিৎ স্কুলটির ভালো চাওয়া ও পাশে থাকা। এই স্কুলে আমার পড়া লেখা শুরু হয়েছে, তাই এই স্কুলের প্রতি আমার আলাদা একটি অনুভূতি জড়িয়ে আছে, দুর্বলতা আছে। তাই এলাকার মানুষের কথা অনুযায়ী, আমি স্কুলের দায়িত্ব নিয়েছি। এখন স্কুলের শিক্ষার মান খুবই ভালো। পাশাপাশি খেলাধুলায় সারাদেশে বেশ অবধান রাখছে।