নারায়ণগঞ্জে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্যের পাশাপাশি অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে চলেছে ব্যাটারিচালিত রিকশা,মিশুক ও অটো। নগরে বৈধ রিকশার তুলনায় ব্যাটারি চালিত অবৈধ অটোরিকশা সংখ্যা অন্তত দশ গুণ বেশি। অনেক রিক্সার গ্যারেজে রয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। বিদ্যুতের ঘাটতির জন্যে এই অটো রিক্সা আর চোরা বিদ্যুৎ সংযোগকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শারীরিক শ্রম কম হয় বলে ব্যাটারি রিক্সাই এখন তাদের প্রথম পছন্দ। তবে এসব রিক্সার সামনে ব্রেক থাকায়, তা হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ করতে গেলেই অনেক সময়ে উল্টে যায়। এছাড়া মহিলাদের ওড়না চাকায় পেঁচিয়ে দুর্ঘটনা যেন নিত্যসঙ্গী। তাছাড়া সিএনজি, প্রাইভেটকারের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে সড়কে ব্যাটারি রিক্সা উল্টে গিয়ে আহত হয় চালকসহ যাত্রীরা।
বিড়ম্বনার সাথে ইদানিং কালে যোগ হয়েছে এক ধরণের রিচার্জেবল ব্যাটারি চালিত অবৈধ অটো রিক্সা। নারায়ণগঞ্জে অবৈধ অটো রিক্সার সংখ্যা বৈধ রিক্সার দশ গুণ। নারায়নগঞ্জে মোটর গাড়ির মতোই দাপট নিয়ে চলা এসব রিচার্জেবল ব্যাটারি চালিত অবৈধ অটো ও রিক্সার কারণে আগের চেয়েও বেড়েছে দুর্ঘটনা, যানজট। সাথে রিচার্জেবল ব্যাটারি দিয়ে এসব রিক্সা চালাতে হয় বলে বিদ্যুতের অপচয় ঘটছে। দিন যত যাচ্ছে ততই বাড়ছে ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সার সংখ্যা প্রায় কয়েক হাজার। অটো রিক্সার বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনাও। প্রতিদিনই নারায়ণগঞ্জে কমপক্ষে যেসব দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায় তার অধিকাংশ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অটোরিক্সার সংখ্যা বৃদ্ধি, মহাসড়কের উপর ও নারায়ণগঞ্জ বাজারে যত্রতত্র পার্কিং,অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকের অসাবধানতা কারণ। আর এইসব শিশু চালকের কারণে প্রাণনাশ হইতে পারে অনেক পরিবারের।
রিচার্জেবল ব্যাটারি চালিত অবৈধ অটো রিক্সা ও রিক্সা গুলো চলছেই প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে। সাধারণ রিক্সার সাথে বাজার থেকে কেনা ইউপিএস,ব্যাটারি এবং ছোট মটর সংযোগকারী এসব রিচার্জেবল ব্যাটারি চালিত অবৈধ অটো ও রিক্সার আধিপত্য এখন নারায়নগঞ্জ জুড়ে। এর ফলে পায়ের সাহায্যে প্যাডেল দ্বারা রিক্সা চালানো কষ্ট বিধায় রিক্সা চালকগণ ব্যবহার করতে উৎসাহিত হচ্ছে এবং দ্রুতগামী বিধায় যাত্রীগণও আরোহনে সাচ্ছন্দ মনে করছে।এর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে এধরনের রিচার্জেবল ব্যাটারি চালিত অবৈধ অটো ও রিক্সার হার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রিচার্জেবল ব্যাটারি চালিত অবৈধ অটো ও রিক্সার রমরমা ব্যবসা চলছে। এগুলো রাস্তায় চলতে গিয়ে অহরহ দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। এতে সাধারণ যাত্রীদের আহতের সংখ্যা কম নয়। প্রতিদিন যাত্রীরা সহ চালকরা আহত হচ্ছেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার প্রয়োজনীয় কোন পদক্ষেপ পরিলক্ষিত না হওয়ায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।
বহিরাগত অপরিচিত চালকের কারণে চুরি ছিনতাই বেড়েছে বলে মনে করছে এলাকাবাসি। ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। ফলে একদিকে যেমন বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে অন্যদিকে বাড়ছে যানজট। এমনিতেই চাহিদামত বিদ্যুত না মেলায় লোডশেডিং-এ অতিষ্ট । তার ওপর অটোরিক্সায় বিদ্যুতের বাড়তি ব্যবহারে যেন ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ অবস্থা দাঁড়িয়েছে। পরিবেশ বান্ধব ও দাম সাধ্যের মধ্যে হওয়ায় দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ব্যাটারি চালিত অবৈধ অটোরিক্সা। দেখতে ভালো লাগায়, পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব এই বাহনে চলতে বেশ আরামদায়ক হওয়ায় দিন দিন এর ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ করে রিচার্জেবল ব্যাটারি চালিত অবৈধ অটো ও রিক্সার জনপ্রিয়তা বাড়লেও ব্যাটারি চার্জে বিদ্যুৎ ব্যাবহারের কোন নিয়ম নীতি না থাকায় এক দিকে যেমন চাপ বাড়ছে বিদ্যুতের। এক একটি অটো-রিক্সায় দুই থেকে সর্বোচ্চ চারটি ব্যাটারি থাকে। যা চার্জ দিতে ১০-১২ ঘন্টা সময় ব্যয় হয়। অটোরিক্সা গুলো সারাদিন চালিয়ে তা সারা রাত বৈদ্যুতিক চার্জে বসানো থাকে। এর ফলে দেশের বিদ্যুৎ খরচ বেড়েছে দ্বিগুন। এ কারণেই বাড়ছে লোডশেডিংও ।
আর এভাবে ব্যাটারি চার্জে অতিরিক্ত ১২-১৩ ইউনিট বিদ্যুত ১টি অটো রিকশার প্রয়োজন হয়। তবে বিদ্যুত ব্যবহারের কোন নীতিমালা না থাকায় এসব ব্যাটারি চালিত অবৈধ অটোরিক্সা অবৈধভাবে চার্জ হচ্ছে শহর ও গ্রামের দোকান এবং বাসা-বাড়িতে।