নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেছেন, অতিরিক্ত ওভারটেকিং এর কারণেই সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কে চলাচলরত সিএনজি, নসিমন, বটবটি ও মাহেন্দ্রা এগুলোকে কিন্তু আমরা সবসময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না।
ওভারটেকিং করতে গিয়ে দেখা যায় এগুলোর উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে এবং দূর্ঘটনা ঘটছে। পাঁচজন ও ছয়জন করে মারা যাচ্ছে। পরিবহন খাদে পড়ছে। এগুলোতে আমাদের সচেতনতা হতে হবে।
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। “আইন মেনে সড়কে চলি, নিরাপদে ঘরে ফিরি’ এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২২ পালিত হয়েছে।
শনিবার (২২ অক্টোবর) সকাল দশটায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বেলুন উড়িয়ে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস এর শুভ উদ্বোধন করা হয়। পরে নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে ঢাক ঢোল বাজিয়ে বর্ণাঢ্য এক র্যালি বের করা হয়।
র্যালিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শুরু করে পুলিশ সুপারের কার্যালয় দিয়ে ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড় হয়ে জেলা পরিষদ দিয়ে আবারও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে সমাপ্ত হয়। পরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএর সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. শামসুল কবীর।
আলোচনা সভায় এসপি রাসেল আরও বলেন, প্রত্যেকটি মহাসড়কে কিন্তু স্পিড মিটার দেওয়া থাকে। হাইওয়ে পুলিশ কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকে কেউ অতিরিক্ত স্পিড মিটারে গাড়ি চালাচ্ছে কিনা। কেউ কেউ দেখা ১২০ কিঃ মিঃ কমে গাড়ি চালায় না। পদ্মা সেতুর ওপর আমি দেখেছি। মাওয়া এক্সওয়ে হাই রোডেও দেখেছি এক্সেলেটর এ পাড়া দিয়ে বসে আছে একবারে ভাংঙ্গা পর্যন্ত ১২০ কিঃমিঃ । মাঝখানে শুধু পদ্মা সেতু টোলটা দিতে পারলেই চলে।
এই বিষয়গুলো থেকে আপনাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। সবাইকে স্পিড মেনে চলতে হবে, যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানো এবং নামানো যাবে না। অতিরিক্ত কোন ওভারটেকিং করা যাবে না। লক্কর ঝক্কর গাড়ি নিয়ে মহাসড়কের চলাচল করা যাবে না। আমাদের সচেতন হবার কোন বিকল্প নেই। আমাদের সবাইকেই সচেতন হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতিবছরই কিন্তু এই দিবসটি পালন করছি। আমাদের রক্তঝরা কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না। অনেকেরই দেখা যাবে ভাই বোন বন্ধু-বান্ধব হাত পা ভেঙ্গে ঘরে বসে আছে। খোঁজখবর নিলে দেখা যাবে সকলে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত নিহত হয়েছেন।
এই সড়ক দুর্ঘটনা আমরা চাই না। আমাদেরকে এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এর জন্য আমাদের সবার প্রথম হচ্ছে সচেতনতা হওয়া। আগে নিজে সচেতন হই পরে অন্যকে সচেতন করি।
এসপি সকলের পরামর্শ চেয়ে বলেন, আমাদের নারায়গঞ্জের উপর দিয়ে হাইওয়ে রোড রয়েছে। এই মহাসড়কে কিভাবে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা যায় এ বিষয়ে আমি আপনাদের সকলের পরামর্শ চাচ্ছি। আমাদের কাঁচপুর ব্রিজের নিচে প্রায় সময় কিন্তু বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
বেশ কিছুদিন আগেও কিন্তু এক সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় জন নিহত হয়েছে। সত্যি এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। তাই আসুন নিজের সচেতন হই এবং অন্যকে সচেতন করি সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করি নিরাপদ সড়ক গড়ে তলি।
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোসা. ইসমত আরা পিএএ’র সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার, বিশেষ অতিথি জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মুহাম্মদ মশিউর রহমান।
আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ অতিথি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. সোহান সরকার, নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহানা ফেরদৌস, নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএর সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. শামসুল কবীর, মটরযান পরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের প্রতিনিধি মোফাজ্জল হোসেন মিন্টু, জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শামসুজ্জামান, জেলা ট্রাক ট্যাংকলরী ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু, জেলা বাস মিনিবাস মালিক মালিক ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক রওশন আলী সরকার, নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাক মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ নিরাপদ সড়ক চাই কমিটির সভাপতি ডা. আল ওয়াজেদুর রহমান প্রমুখ।