বাউল সম্রাট লালন সাঁইজীর ১৩২ তম প্রয়াণ দিবসে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে সোমবার (১৭ অক্টোবর) বিকাল ৫টায় ২নং রেলগেটস্থ বাসদ কার্যালয়ে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনাসভা শেষে সংগীত পরিবেশন করেন চারণের শিল্পীবৃন্দ।
চারণ জেলার আহ্বায়ক প্রদীপ সরকারের সভাপতিত্বে এবং জেলার সদস্য সচিব জামাল হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন, চারণের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক নিখিল দাস, প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি জাকির হোসেন, চারণের সদস্য সেলিম আলদীন প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বাউল কবি লালন ছিলেন শক্তিমান কবিসত্তার অধিকারী। তার গানে উপমা-অলঙ্কার তিনি অত্যান্ত সুন্দর ভাবে প্রয়োগ করেছেন সহজভাবে, সহজ কথা বলবার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তার। তিনি আধুনিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করতে পারেননি। অথচ অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।সাহিত্যিক অন্নদাশংকর রায় লিখেছেন, বাংলার নবজাগরণে রাম মোহনের যে গুরুত্ব বাংলার লোক মানসের দেয়ালী উৎসবে লালনেরও সেই গুরুত্ব। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর লালনের মৃত্যুর পর ‘হিতকরী’ পত্রিকায় তার সম্পর্কে লিখা হয়, নিজে লিখাপড়া জানিতেন না, কিন্তু তাহার রচিত অসংখ্য গান শুনিলে তাঁহাকে পরম পন্ডিত বলিয়া বোধ হয়। তিনি কোন শাস্ত্রই পড়েন নাই , কিন্তু ধর্মালাপে তাহাকে বিলক্ষণ শাস্ত্রবিদ বলিয়া বোধ হইত। লালন জাত-পাত, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। জাতের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে/লালন বলে জাতের কী রুপ দেখলাম না এই নজরে’। আজ যখন সাম্প্রদায়িকতার আগুনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘর-বাড়ি-উপসনালয় আক্রমন হয়, যখন বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে মৌলবাদী গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়; তখন লালনের চিন্তা-মত জানা ও চর্চা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। আজও সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠী ও সরকারের রোষানলে পড়ে শরীয়ত বাউলকে জেলে যেতে হয়, আগুনে পুড়তে হয় বাউল রানেশ ঠাকুরের সংগ্রহশালা।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরই প্রথম ‘প্রবাসি’ পত্রিকায় লালনের ২০টি গান প্রকাশ করার মাধ্যমে শিক্ষিত সমাজের মাঝে লালনের পরিচিতি তৈরী করেন। লালন ছিলেন প্রান্তীক জনগোষ্ঠীর অংশ। তৎকালীন সময় জমিদারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ প্রজাদের দুঃখের কথা ‘গ্রামবার্তা’ প্রত্রিকায় কাঙাল হরিনাথ লিখতেন, এতে রুষ্ট হয়ে ঠাকুর বাড়ীর জমিদাররা তাকে ধরে নিয়ে আসলে লালন তার বাহিনী নিয়ে পাইক-পেয়াদাদের হটিয়ে দেন। তাই আজ লালনের দর্শন থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমান ফ্যাসীবাদী শাসন ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।