খানপুর রেললাইন বাজার থেকে শুরু করে তল্লা, কায়েমপুর এলাকায় চলছে মাদক সম্রাট হৃদয় ওরফে ইয়াকুব এবং তার ভাই হোসেনের রমরমা মাদক ব্যবাসা। খানপুর রেললাইনে ইয়াকুবের শেল্টারে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রয় করছে মাদক ব্যবসায়ীরা।
তল্লা এলাকায় যাঁরা মাদক কিনতে বা সেবন করতে আসেন, তাঁদের হাতে একটি পানির বোতল থাকে। এটা দেখে মাদক ব্যবসায়ীরা বুঝতে পারেন এই ব্যক্তি তাঁদের ক্রেতা।
তল্লা এলাকা সহ আশেপাশের আরো বেশ কিছু এলাকায় ইয়াকুবের শেল্টারে দেদারছে মাদক কেনাবেচা চলছে। অনেক স্পটে মাদক সেবনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। তল্লা এলাকায় মাদক ক্রেতা ও সেবীদের জন্য একেক রকমের সংকেত ব্যবহার করে থাকেন।
কোথাও হাতে পানির বোতল বা বিশেষ কোনো বস্তু রাখা, মাথা বা কাঁধ চুলকানো এমন সব সংকেত রয়েছে। মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে এসব এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের ভেতরে মাঝেমধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটে।
তল্লা এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন ইয়াকুব। তার ৪-৫ জন নারীসহ একটি সংঘবদ্ধ দল আছে। এঁরা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না হলেও এলাকার প্রভাবশালীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। সে কারণে তাঁরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। এলাকাবাসীও ভয়ে কিছু বলেন না।
তল্লা এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, রোজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাদকসেবী এবং মাদক ব্যবসায়ীরা তল্লা এলাকার এসে জড়ো হন। টিনশেডের বাড়িতে মাদক সেবনের আড্ডা বসে। অন্য বাড়ি থেকে মাদক বিক্রি করা হয়। অনেক দূরের এলাকা থেকেও মোটরসাইকেলে করে মাদকসেবীরা তল্লা এলাকায় মাদক কিনতে আসেন। সেবন করেন অন্যত্র। মাঝেমধ্যে পুলিশ টহল দিতে আসে বটে, তবে আশপাশে মাদক বিক্রেতাদের লোক থাকেন। পুলিশ দেখলেই তাঁরা মুঠোফোনে বিক্রেতাদের সাবধান করে দেন। সবাই কিছুক্ষণের জন্য গা ঢাকা দেন। পুলিশ চলে গেলে অবস্থা আবার আগের মতোই।
স্থানীয় তল্লা এলাকার বাসিন্দা ফরাজী হাওলাদার জানান, এখানে যাঁরা মাদক কিনতে বা সেবন করতে আসেন, তাঁদের হাতে একটি বোতল থাকে। পানির বোতল একটা সংকেত। এতে মাদক ব্যবসায়ীরা বুঝতে পারেন পানির বোতল হাতে থাকা ব্যক্তি তাঁদের ক্রেতা। এই কৌশল অবলম্বন করে এখানে মাদকের রমরমা ব্যবসা চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান তল্লা,খানপুর রেললাইন, কায়েমপুর,হাজীগঞ্জ,ইসদাইর,শিবু মার্কেট,ওয়াবদারপুল—এসব এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন ইয়াকুব ও তার ভাই হোসেন। তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। ইয়াকুব ও তাঁর সহযোগীরা ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় মাদক ব্যবসাসহ নানা রকম অপরাধমূলক কাজে জড়িত। বিষয়টি সবাই জানেন কিন্তু ভয়ে কেউ কিছু বলেন না। ইয়াকুবের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। কিন্তু কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে আবার আগের মতোই মাদক ব্যবসার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ফতুল্লা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রিজাউল হক দিপু সকাল নারায়ণগঞ্জ কে বলেন, মাদকের বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিদিন পুলিশের একাধিক দল বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। মাদক কারবারি যে–ই হোক, তাঁকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।