সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
ভুয়া সামরিক কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে ২ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪
সম্প্রতি একজন নারী ভুক্তভোগী র্যাব-৪ বরাবর অভিযোগ করেন যে, আরাফাত তুষার নামে এক প্রতারক সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দিয়ে তাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিবাহের উদ্দেশ্যে তার সহযোগী বন্ধু, খালাতো ভাই ও নিজেকে মেজর পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীর বাসায় এসে প্রতারণামূলকভাবে বিবাহের অভিনয় করে এবং নানা রকম হুমকি প্রদান করে। অভিযোগ প্রাপ্তির পর র্যাব-৪ গোপন অনুসন্ধান ও স্থানীয় তদন্তের মাধ্যমে উক্ত বিষয়ের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়।
মঙ্গলবার (১২এপ্রিল) রাত ৮টা ১০ মিনিটের সময় এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর শাহ আলী থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ০১ টি পিস্তল, ০২ রাউন্ড গুলি, ০২ টি ওয়াকিটকি সেট, সামরিক বাহিনীর ইউনিফর্ম, ০১ জোড়া বুট, ০২ সেট র্যাংক বেজ, ০২ টি পাসপোর্ট, ০২ টি চেক বই, ভিজিটিং কার্ড এবং ০৪ টি মোবাইলসহ ০২ জন প্রতারককে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মুন্সীগঞ্জ জেলার ইয়াসিন আরাফাত তুষার (২৮)ও ঢাকা জেলার মোঃ আল আমিন @ হীরা (২৫)।
ভুক্তভোগীর সাথে গ্রেফতারকৃত আসামী তুষারের ফেসবুকে পরিচয় হয় যার সুবাদে সে নিজেকে মেজর পরিচয় দেয়। এরপর হতে উক্ত প্রতারক তুষার ভিডিও কলে বিভিন্ন সময় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পোশাক পরিহিত ছবি ভুক্তভোগীর মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে সত্যতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করে। ভিডিও কলে বিভিন্ন ভিজিটিং কার্ড এবং ওয়াকিটকি সেটসহ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট দেখায়। সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত কমান্ডোসহ বিভিন্ন র্যাংকের ব্যাজ,মনোগ্রাম ইত্যাদি দেখিয়ে ভিকটিমকে প্রতারিত করে। প্রতারণার একপর্যায়ে তুষার ভুক্তভোগীকে বলে সে বর্তমানে মিশনে আফ্রিকায় অবস্থানরত এবং সম্প্রতি সে বাংলাদেশে আসবে। এরপর দেশে আসার অভিনয় করে মিথ্যা সংবাদ দিয়ে তার সাথে দেখা করে। পরবর্তীতে পুনরায় মিশনের উদ্দেশ্যে আফ্রিকা চলে যাবে বিধায় ভুক্তভোগীকে বিবাহের চাপ দিতে থাকে। প্রতারক ইয়াসিন আরাফাত তুষার তার এক বন্ধু হীরাকে ক্যাপ্টেন ও খালাতো ভাই এবং অন্য একজন সহযোগী হৃদয় খানকে ক্যাপ্টেন ও জুনিয়র সহকর্মী বলে ভুয়া পরিচয় দেয়। ভুক্তভোগীকে বিদেশে নিয়ে যাবে বলে বিয়ের চাপ দিতে থাকলে ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে জানতে পারে এতদিন মিথ্যা পরিচয় দিয়ে মেজর হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে উক্ত ইয়াসিন আরাফাত তুষার এমন প্রতারনামূলক কর্মকান্ড করে। গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে আসামী তুষার উপরোক্ত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তুষার ২০০৯ সালে মানিকদীর একটি স্কুল হতে এসএসসি পাশ করে। এরপর ২০০৯ সালেই স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া চলে যায় কিন্তু পড়াশুনা শেষ না করে ২০১৩ সালে দেশে চলে আসে। পরবর্তীতে এক মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে। তুষার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে গমন করেছে বলে জানায়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের দিকে দেশে ফিরে আসে এবং মেজর, র্যাব কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইত্যাদি বিভিন্ন পরিচয়ে প্রতারনামূলক কাজে লিপ্ত থাকে।
প্রতারনার কৌশলঃ গ্রেফতারকৃত আসামী তুষার তার সহযোগীদের নিয়ে নিম্নোক্ত কৌশলে প্রতারণা করে আসছিলোঃ সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দিয়ে থাকে, বিভিন্ন সময় গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে প্রচার করে থাকে, বিভিন্ন সময় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পোশাক পরা ছবি মেসেঞ্জারে প্রেরণ করে, ভিডিওকলে ওয়াকিটকি সেট প্রদর্শন করে, বিভিন্ন র্যাংক-ব্যাজ প্রদর্শন করে, প্রশিক্ষনের বিভিন্ন সার্টিফিকেট প্রদর্শন করে, বিভিন্ন প্রকার ট্রাভেল ব্যাগ, ব্যকপ্যাক, তাবু, জার্সি, ওয়ার্কিং ড্রেস, ওয়াকিটকিসেট ইত্যাদি দেখিয়ে মিশনে গমনের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিত, বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ভুয়া আইডি কার্ড প্রদর্শন করে, সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করে তাদের সাথে ঘনিষ্ঠতার কথা বলে ও তার হেফাজতে থাকা অবৈধ পিস্তল দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।