সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
জুলাই হত্যাকাÐের বিচার, প্রয়োজনীয় সংস্কার, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা কর অন্তবর্তী সরকারের এক বছরের কাজের শ্বেতপত্র প্রকাশ কর।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে আজ ১১ জুলাই ২০২৫ বিকাল ৪টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী আয়োজনের সূচনা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, বাসদ ফতুল্লা থানা শাখার সদস্যসচিব এস এম কাদির, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আক্তার, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব প্রদীপ সরকার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার আহŸায়ক সাইফুল ইসলাম।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, আগামী ৫ আগস্ট জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি হবে। বাংলাদেশের মানুষ এক অপ্রতিরোধ্য লড়াই আর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে এক স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়েছিল এই জুলাই মাসে। সে সময় মানুষ ¯েøাগান তুলেছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, লুটাপাট-দূর্নীতি, গুম-খুন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, কর্তৃত্ববাদ ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে। মানুষ চেয়েছিল এসব থেকে মুক্ত একটা সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ। কিন্তু বছর না পেরোতেই মানুষের সেই আশা ক্রমশ: ফিকে হয়ে আসছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, এক বছর পার হলেও সরকার এখন পর্যন্ত আহত-নিহতদের একটা পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে পারল না, যা গোটা জাতির জন্য দুঃখজনক। আহতদের যথাযথ চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে চলছে নানা তালবাহানা। যার ফলে জুলাই এর আহতরা প্রায়ই হাসপাতাল থেকে রাস্তায় নেমে আসছেন। প্রায় দেড় সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করা হল সে হত্যাকাÐের বিচারকেও এখনও দৃশ্যমান করা যায়নি। বরং সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা না দিয়ে গড়পড়তা অভিযোগে ঢালাও মামলা দায়েরের মাধ্যমে মামলাকে দুর্বল করা হচ্ছে যা খুনিদের ভবিষ্যতে রক্ষা করতে সহযোগিতা করবে বলেই মনে হয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর থেকেই আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগ নিয়ে সারা দেশে মব সন্ত্রাস সংঘটিত হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই মবকে নিয়ন্ত্রণ এর চেষ্টা না করে বরং কিছু ক্ষেত্রে উসকানোর ঘটনাও দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। এই মবের কাছে সরকার জিম্মি হয়ে আছে। সরকারের প্রেস সচিব যখন বলেন, ‘এই মব বাস্তবে একটা প্রেশার গ্রুপ’ এতে গোটা জাতির তাজ্জব হওয়া ছাড়া আর কোন ভিন্ন পথ থাকে না।
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম অগ্রণী শক্তি ছিলেন এদেশের নারীরা। অথচ সেই নারীদের উপরে আক্রমণ নেমে এসেছে সবার আগে। উগ্র ধর্মীয় ফ্যাসিস্ট শক্তি সারা দেশেই নারীদের স্বাধীন চলাফেরার উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে, হামলা হয়েছে আদিবাসীদের উপর ও মাজারে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে। এসকল পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ধ্বংস করার ঘটনা ঘটে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধ এই জাতির সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যুদ্ধাপরাধী শক্তিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হচ্ছে, জুলাই অভ্যুত্থানের আন্দোলনের চেতনার সাথে যা সাংঘর্ষিক।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু যে সকল বিষয় নিয়ে সকলের ঐকমত্য আছে সে সকল সংস্কারকে এগিয়ে নিতে সরকার গড়িমসি করছে। আবার ঐকমত্য কমিশনে যে আলোচনা হচ্ছে সেখানে শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের কিংবা আদিবাসী, দলিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা নেই। অর্থাৎ শুধু রাষ্ট্রের উপরিকাঠামোতে পরিবর্তন করে কোন কার্যকর পরিবর্তন আনা যাবে না।
একই সাথে পূর্ববর্তী হাসিনা সরকারের মতো এই সরকারের নানা কুশীলবদের বিরুদ্ধেও শত শত কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ আসছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বিশেষ রাজনৈতিক দলকে তোষণ ইত্যাদি নানা কিছু ঘটিয়ে এরা জুলাই অভ্যুত্থানের মূল স্পিরিটের বিপরীতে হাঁটা শুরু করেছেন বলে মন্তব্য করেন নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ সরকারের এক বছরের কাজের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান।
সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, বিচার, সংস্কার, নির্বাচনের কাজে মনযোগ না দিয়ে সরকার এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থে বন্দর ইজারা, রাখাইনে করিডোর, অস্ত্র কারখানা নির্মাণের অনুমতি ও স্টার লিংকের সাথে চুক্তি করে দেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ চক্রান্তে জড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। নেতৃবৃন্দ এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা বিঘœ হতে পারে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। একই সাথে অবিলম্বে সুষ্ঠ, অবাধ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করারও দাবি করেন। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিন, এটাই এই মুহুর্তে অন্তরবর্তী সরকারের সবচেয়ে জরুরি কাজ। অন্যথায় দেশে আরও ভয়াব্হ সংকট দেখা দিতে পারে বলে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন।