সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত ক্লুলেস শাহাদাত হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনপূর্বক হত্যার মূলহোতা ও পরিকল্পনাকারী জাহিদসহ ০৩ জন’কে ঢাকার ধামরাই ও আশুলিয়া থানাধীন আমরাইল এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গত ২০২১ সালের ০১ আগস্ট ঢাকার ধামরাই এ আমরাইল গ্রামের শাহাদাত নামক যুবক কালিয়াকৈরে তার কর্মস্থলে গমন করে ; অতঃপর গত ২০২১ সালের ০৪ আগস্ট হতে বাড়ীর সাথে সে কোন যোগাযোগ করেনি। গত ২০২১ সালের ০৬ আগস্ট হতে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় গত ২০২১ সালের ০৮ আগস্ট কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে তার পরিবার। অতঃপর গত ১২ আগস্ট ২০২১ তারিখ ধামরাই এর আমরাইল গ্রামের একটি কাঠ বাগান থেকে নিখোঁজ শাহাদাত এর অর্ধগলিত ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। উক্ত ঘটনায় ঢাকার ধামরাই থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নম্বর- ২৪। পরবর্তীতে ময়না তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর ভিকটিম শাহাদাত এর মা বাদী হয়ে ধামরাই থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং- ৩২। উক্ত হত্যাকান্ডটি গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের তৈরী হয়।
উক্ত হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে ধামরাই থানা পুলিশ গত ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সন্দেহে শাহাদাত এর বন্ধু জাহিদকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে জাহিদ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান না করায় রিমান্ড শেষে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
র্যাব উক্ত ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাবের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল ধামরাই ও আশুলিয়া থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের মূলহোতা ঢাকা ধামরাই এলাকার মোঃ আক্কাছ আলীর ছেলে মোঃ জাহিদুল ইসলাম @ জাহিদ (২২), ও তার সহযোগী মোঃ শুকুর আলীর ছেলে আবু তাহের (২৪), এবং মোঃ মিজানুর রহমানের ছেলে সবুজ হোসেন (২৮)’কে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বর্ণিত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। জানা যায়, ভিকটিম শাহাদাত ধামরাইয়ের যাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল গ্রামের কোহিনুর ইসলামের ছেলে। ভিকটিম কালিয়াকৈর উপজেলার বারইপাড়ায় একটি প্রতিষ্ঠিত কারখানার কর্মচারী ছিলেন। গত ২০২১ সালের ১৪ আগস্ট গ্রেফতারকৃত জাহিদ এর প্রেমিকার সাথে শাহাদাত এর বিবাহের দিন ধার্য ছিলো। নিজের প্রেমিকার অন্যত্র বিবাহ জাহিদ মেনে নিতে না পারার জের ধরে জাহিদ তার গ্রেফতারকৃত অন্যান্য সহযোগীদের সাথে পরিকল্পনা করে শাহাদাতকে হত্যার নকশা আঁকে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ভিকটিম ও গ্রেফতারকৃত আসামীরা সকলেই ধামরাই থানাধীন মাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা এবং তাদের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এ সর্ম্পকের কারণে তাদের মধ্যে সচারচর সাক্ষাত হতো এবং তারা একত্রিত হয়ে ভাড়া বাসা ও নিজ এলাকায় জুয়ার আসর বসাতো। বিগত ২০২১ সালের ০৩ আগস্ট তারিখ শাহাদাত চন্দ্রা থেকে গাজীপুর জেলার কাশিমপুর নিকটবর্তী মাটির মসজিদ এলাকায় ডেকে নিয়ে আসা হয়। আসার এক পর্যায়ে আসামীরা তাকে ফুসলিয়ে জুয়া খেলতে ধামরাই এর আমরাইল এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে ভুক্তভোগী’কে ফুসলিয়ে ০২ দিন অবস্থান করায়। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ০৬ আগস্ট তারিখে সন্ধ্যার সময় সবাই একত্রে ভুক্তভোগীকে নিয়ে ধামরাই এর আমরাইল এলাকায় ভাড়া বাসায় আসে। সেখান থেকে আশুলিয়া থানাধীন একটি ফাঁকা নির্জন এলাকায় নিয়ে শাহাদাতের হাত পা বেঁধে ফেলে। প্রথমে জাহিদ ভুক্তভোগীকে চর-থাপ্পর মারে এবং গোপনাঙ্গে ৪-৫টি লাথি মারে। এ সময় তাহের ভুক্তভোগীর মাথা চেপে ধরে বসে ছিলো এবং অন্যান্যরা হাত পা ধরে ছিল। পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে থাকা লাঠি দিয়ে ভিকটিমের মাথায় আঘাত করে তার মৃত্যু সুনিশ্চিত করে। তারপর গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা শাহাদাতের লাশ ভ্যানচালক সবুজের ভ্যানযোগে ধামরাই থানাধীন আমরাইল পুকুরিয়া সাকিনস্থ মনুমিয়ার কাঠবাগানের কাছে নিয়ে যায়। পরবর্তী গাছের একটি ডালে কাঁচা পাট দিয়ে ফাঁস তৈরী করে ঝুলিয়ে রাখে যাতে করে এলাকার লোকজন জানতে পারে এটি একটি স্বাভাবিক আত্মহত্যা। অতপর তারা দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করে তাদের পূর্বের ভাড়া বাসা চক্রবর্তী মাটির মসজিদ এলাকায় চলে যায়।
উল্লেখ্য যে, উক্ত সময়ে প্রবল বর্ষনের কারণে আশে পাশের লোকজনের উপস্থিতি খুব কম ছিল বলে গ্রেফতারকৃতরা জানায়। উক্ত ঘটনার পর তারা নিজ নিজ এলাকায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকে। পরবর্তীতে র্যাব-৪ এর ছায়া তদন্তে চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস শাহাদাৎ হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং পরিকল্পনাকারীসহ জড়িতদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।