সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
স্টাফ রিপোর্টার (আমিনুল):
টানা বৃষ্টিতে না’গঞ্জের ডিএনডিতে ফের জলাবদ্ধতা গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে আবারো নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা ও এর আশপাশের ডিএনডি অধ্যুষ্যিত এলাকার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তলিয়ে গেছে ঘরের মেঝে, রান্না ঘর, টয়লেট ও রাস্তাঘাট। বিশেষ করে বিভিন্ন এলাকার সড়কের কোথাও হাটু আবার কোথাও কোমর সমান পানি জমে গেছে। ফলে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে ডিএনডিবাসীদের মাঝে।
এছাড়া টানা বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জ শহরেও দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। বৃষ্টিতে শহরের অনেক এলাকার সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। শহরের প্রধান প্রধান সড়কেও বৃষ্টির পর জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বিশেষ করে শহরের গলাচিপা, নন্দিপাড়া দেওভোগ এলাকায় জলাবদ্ধতা সবচেয়ে বেশী দেখা গেছে।
এদিকে বৃষ্টিতে ৩২ দশমিক ৮ কিলোমিটার ডিএনডি বাধের ভেতর ৫৬ বর্গ কিলোমিটার বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে ফতুল্লার রামার বাগ, সস্তাপুর, গাবতলা, কায়েমপুর, চাঁদমারী, ইসলাম বাগ, লালপুর, মাসদাইর, ইসদাইর, গাবতলী, এনায়েত নগর, তল্লা, সবুজবাগ, কুতুবপুর, পাগলা, দাপা, পিলকুনি, ভুইগড়, রঘুনাথপুর, রসুলপুর, কুতুবআইল, লামাপাড়া, সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলি, হাজীগঞ্জ, গোপটা, গোদনাইল, ধনকুন্ডা, জালকুড়ির নিন্ম এলাকাতে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।
সরজমিনে দেখা যায়, ডিএনডি অভ্যন্তরের ফতুল্লার ইসদাইর, গাবতলী, কাপুড়াপট্টি, টাগারপাড়, লালপুর ও সস্তাপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায় জলাবদ্ধতার দৃশ্য। নিচু এলাকার একতলা কাঁচা, পাকা, ও বেড়ার বাড়িগুলোর মেঝে পানিতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ডিএনডির পানি নিষ্কাশনে যে খাল রয়েছে তা বেদখল হয়ে আছে। বিভিন্ন স্থানে খালের উপর মাচা দিয়ে ও বালু ভরাট করে আধা পাকা দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। অনেকে বেআইনীভাবে খালের উপর কৃত্রিম কালভার্ট তৈরী করে খালের প্রশস্ততায় বাধা সৃষ্টি করেছে। ফতুল্লার বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্প প্রতিষ্ঠান খালের জায়গা দখল করে রেখেছে। এ কারণে খাল এখন সরু নালীতে পরিনত হয়েছে। জলাবদ্ধতার পানি সরু খাল দিয়ে দ্রুত গতিতে নিষ্কাশিত হতে পারছে না।
ডিএনডির পানি নিস্কাশনের প্রধান খালগুলো দিয়ে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকলেও শাখা খালগুলো ময়লা আবর্জনায় সয়লাব ও অবৈধ দখলের কারণে প্রয়োজনের তুলনায় সংকীর্ণ থাকায় অনেক এলাকার পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান। তবে মহাসেন এর প্রভাবে চলা বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকারে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকে।
সূত্রমতে, অপরিকল্পিত ভাবে বাড়ি-ঘর, মিল, কল-কারখানা, অফিস, আদালত ব্যাংক, বীমা, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণ করতে গিয়ে যে যেভাবে পেরেছে ডিএনডির পানি নিষ্কাশনের খালগুলো বেদখল করে ফেলেছে। এ খালগুলো দিয়ে ডিএনডির ভেতরে বর্ষার সময় জমে থাকা পানি প্রধান নিষ্কাশন খালে এসে জমা হয় এবং প্রধান নিষ্কাশন খাল দিয়ে ডিএনডির ভেতর জমে থাকা অতিরিক্ত পানি শিমরাইলস্থ পাম্প হাউজের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প দ্বারা নিষ্কাশন করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলা হয়।
এদিকে জলাবদ্ধতার কারণে অনেক স্কুলে ক্লাস করতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। রাস্তা-ঘাট, বাসা-বাড়ি, শিল্প-কলকারখানাসহ সর্বত্র পানি। পানি সেচ করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলার জন্য পাম্প হাউজ থাকলেও পানি কমছে না। বরং বাড়ছে। আর এ জন্য অনেকটা দায়ী ডিএনডিবাসী। অনেকটা দায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড।
ডিএনডিবাসী পানি নিষ্কাশনের খালগুলোতে পলিথিন ও বর্জ্য ফেলে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। আবার পানি উন্নয়ন বোর্ড খালগুলো সংস্কার করলেও শুধু পানির উপর ভাসমান কচুরিপানা পরিষ্কার করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। অনেক খাল আবার কচুরিপানাও পরিস্কার করেনি। এতে পানি সহজভাবে পাম্প হাউজের পাম্পের সামনে যেতে পারছে না। ফলে সৃষ্টি হয়েছে কৃত্রিম বন্যা।
১৯৬২-৬৮ সালে ৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমি নিয়ে তৈরি করা হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধ। ডিএনডির সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এ বাঁধ এলাকায় বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ লোকের বসবাস। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ডিএনডিতে বসবাসকারীদেরকে এখন চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।