দৈনিক সোজা সাপটা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আবু সাউদ মাসুদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তার পিএস হাফিজুর রহমানের দায়ের করা মামলায় গতকাল বুধবার বেলা ১২টার দিকে আমলী আদালত ‘ক অঞ্চল’র বিচারক মোনালিসা এ আদেশ দেন।
‘দৈনিক সোজা সাপটা’ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক আবু সাউদ মাসুদ নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কার্যকরী কমিটির নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একইসাথে, গত ২০ বছর যাবৎ দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক আমার দেশ, দৈনিক আমাদের সময় ও দৈনিক রূপালীসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় অত্যন্ত সুনামের সহিত কাজ করেছেন আবু সাউদ মাসুদ।
গ্রেফতারী পরোয়ানার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কোনও অন্যায় বা মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করিনি। আমার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা ও ওয়ারেন্ট হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো, বিতর্কিত এই আইনে কোনো সাংবাদিদের রিরুদ্ধে মামলা বা হয়রানী করা হবে না। কিন্তু সরকার তাদের সেই কথা রাখতে পারে নাই।
বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখছি সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করার জন্য এই আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমার বিরুদ্ধে মামলা এবং ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। এই বিষয়ে আমি সরকার উচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। একইসাথে আইনীভাবেই আমি এই মামলা ও ওয়ারেন্টের মোকাবিলা করবো।
ওয়ারেন্টের বিষয়ে আবু সাউদ মাসুদের আইনজীবী এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আসলে সংবাদপত্রের স্বাধীণতাকে হরণ করার জন্যই এই আইনটি তৈরি করা হয়েছে। সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করার জন্য আইনটি তৈরি করেছে সরকার। সাংবাদিকতাকে ধ্বংশ করার জন্যই এই মামলা দেয়া হয়েছে বলে দাবি প্রখ্যাত এ আইনজীবীর।
জানা গেছে, শামীম ওসমানকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে গত ৮ ডিসেম্বর রাতে দৈনিক সোজা সাপটা পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক আবু সাউদ মাসুদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় মামলা দায়ের করে সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) হাফিজুর রহমান।
এ মামলায় প্রথমে হাইকোর্ট থেকে দুই সপ্তাহের জামিন পান আবু সাউদ মাসুদ। পরবর্তীতে চার্জশীট প্রদানের পূর্ব পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করে সাইবার ট্রাইবুনাল আদালত। গতকাল বুধবার আদালতে চার্জশীট প্রদান করে পুলিশ। পরবর্তীতে বিবাদীর আইনজীবী আদালতে টাইম পিটিশন চাইলে আদালত তা না মঞ্জুর করে আবু সাউদ মাসুদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে।
এর আগে, মামলার এজাহারে নিজেকে সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সচিব পরিচয় দিয়ে বাদী হাফিজুর রহমান উল্লেখ করেন, সাংবাদিক আবু সাউদ মাসুদ তার পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘ইবলিশের খপ্পরে সোজাসাপটা’ শিরোনামে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ সংবাদ প্রকাশ করে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ছবি বিকৃত করে রাজনৈতিকভাবে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তার বিরুদ্ধে ‘বিকৃত’ তথ্য প্রকাশ করে। প্রকাশিত তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার কোনও মিল নেই বলে মামলায় অভিযোগ করেন হাফিজুর রহমান। এজাহারে আরও বলা হয়, ওই শিরোনামের প্রতিবেদনটি পত্রিকার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়। এই প্রতিবেদনের কারণে পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে শামীম ওসমানের মানহানি হয়েছে। এ অবস্থায় তিনি সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সঙ্গে আলোচনা করে থানায় মামলা করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।