নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মশিউর রহমান পিপিএম বার এর যোগদানের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে সংবর্ধনা ও সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ভবনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার বিভিন্ন সাংবাদিকসহ পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় সাংবাদিক ও পুলিশগণ বক্তব্যে নিজেদের এলাকার বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ওসি মশিউর রহমান ২০ নভেম্বর ২০২০ থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ পর্যন্ত তার নেতৃত্বে থানা পুলিশ বিভিন্ন বড় ধরনের অপরাধের উদঘাটনসহ সফলতা অর্জন করেছে।
তার নেতৃত্বে গত দুই বছরে ক্লু-লেস হত্যা মামলাসহ মোট ২৪ টি মামলা দায়ের হয় থানায়। তার মধ্যে ২২টি মামলার রহস্য উদঘাটন করে ৩৯ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১৫ জন আসামি বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। এছাড়া গত দুবছরে ৬ টি ডাকাতি মামলা দায়ের হয় থানায়। এর মধ্যে ৫ টি মামলার রহস্য উদঘাটন করে ডাকাতি হওয়া মালামাল উদ্ধারসহ ২৬ জন আসামিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১০ জন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে ১৪৭টি মাদক মামলায় ৩১৫ জন আসামিসহ ১০ হাজার ১১৫ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট, ৭২ কেজি ৫০০ গ্রাম গাঁজা, ৮২০ বোতল ফেনসিডিল, ৪০ বোতল বিদেশী মদ ও ৩২৫ পুরিয়া হেরোইন উদ্ধার করে তারা।
তাছাড়া বর্তমান সময়ের আলোচিত অপরাধী কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ৬৮ জনকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং ৭৫ জন কিশোর গ্যাং সদস্যের অভিভাবকের মাধ্যমে তাদের সতর্ক করে পুলিশ।
নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে ৭২৫টি জিআর, ৬৮৩ টি সিজার, ৮৯ টি ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামি এবং দীর্ঘদিন যাবত পলাতক থাকা মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ১ আসামি এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া তিন আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন তারা। এ পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৭৭৩ টি ওয়ারেন্ট নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
এছাড়া তালিকাভুক্ত ৪ জন সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্রধারী ৫ জন, চাঁদাবাজ ২৩ জন, ছিনতাইকারী ৭৬ জন, অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্য ১০ জন, পুলিশ আইন মামলার ১১৫ জন, ৫৪ ধারায় ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া নিবন্ধন ফরম বিতরণ ৩ হাজার ১৯৪ টি, ৯৯৯ এর ৬ হাজার ৬৬০ টি কল রিসিভ করে ৬ হাজার ৫১৫ টির ব্যবস্থা গ্রহণ করে নারী শিশু, বয়স ও প্রতিবাদ মোট ৭ হাজার ৭২০ জনকে সেবা দেওয়া হয়।
বিভিন্ন মসজিদভিত্তিকসহ নানা জনসচেতনতা সভায় যোগদান করে ২২৪ টি এলাকার মোট ২৮ জন মাদক ব্যবসায়ী ও ৩৬ জন কিশোর অপরাধীকে আত্মসমর্পণ করানোর মাধ্যমে থানায় হাজিরা গ্রহণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সহায়তা করেন ওসি মশিউর।
এ থানা এলাকার বিভিন্ন ঘটনায় ১৬৫ টি নন এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল এবং অপরিচিত আগন্তুকের মতিবিধি পর্যবেক্ষনের জন্য সর্বমোট ২৫ হাজার ৮২০ টি বি-রোল ইস্যু করা হয়েছে।
ডাকাত দলের হাতে ডাকাতি হওয়া ক্লু-লেস অপরাধের তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ড্যানিশ কোম্পানির ২৫ লাখ টাকার মালামাল এবং টিসিবির ৩০ লাখ টাকার সয়াবিন তেল উদ্ধার করে পুলিশ।
২০২১ সালের ২৮ মার্চ দেশের আলোচিত ঘটনা জামায়াত ইসলামের সকাল-সন্ধ্যা হরতালে ওসি মশিউরের নেতৃত্বে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ অল্প সময়ের মধ্যে কোন ধরণের প্রাণহানী ছাড়াই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।
উক্ত ঘটনা সংক্রান্তে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বিভিন্ন আইনে ৮ টি মামলা করা হয় এবং গত ১০ জুন এসআই আজিজুর রহমানকে বিহারী কলোনি বড় মসজিদে মারপিটের ঘটনার প্রেক্ষিতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার নং-১৭(৬)২২ এর এজাহারনামীয় আসামিদের অভিযানে গ্রেফতারকৃত আসামীদের ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য বিহারী, ক্যাম্প হইতে ২ থেকে ৩’শ পুরুষ ও মহিলা আন্দোলন নেমে ইট-পাটকেল ও পাথর নিক্ষেপ ও টায়ার পুড়িয়ে আটককৃত আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে স্বল্প সময়ের মধ্যে কোন ধরনের প্রাণহানী ও হতাহত ছাড়াই গ্যাস সেল ৪৭ টি, ৩৫০ রাউন্ড রাবার বুলেট করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হন।
গত ১৫ নভেম্বর জেলা পুলিশ কার্যালয়ে তৃতীয় বারের মতো শ্রেষ্ঠ ওসি হন মশিউর রহমান।
এর আগে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর মশিউর রহমান নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা নির্বাচিত হয়েছেন। পরবর্তীকালে একই বছরের ২২ নভেম্বর ঢাকার সেগুন বাগিচায় ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে ডিআইজি হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে শ্রেষ্ঠ ওসি হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের এ পুরস্কার গ্রহণ করেন মশিউর রহমান।
এছাড়া তিনি চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পুনরায় ঢাকা বিভাগের শ্রেষ্ঠ ওসি হন। তাছাড়াও তিনি কয়েকবার জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি নির্বাচিত হয়ে পুরস্কার পেয়েছেন।
বক্তব্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোঃ মশিউর রহমান বলেন, গত দুবছর যাবত আমি এ থানায় কর্মরত আছি। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমি ভূমিকা রেখেছি। বিশেষ করে ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক, কিশোর গ্যাংসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের। আসলে কিশোর আর মাদকের মধ্যে একটা সম্পর্ক রয়েছে। কারণ মাদকসেবিরা পরিবার কাছে মাদক টাকা না পাওয়ায় নানা রকম অপরাধ করে থাকে।মূলত মাদক সেবনের জন্যই কিশোর গ্যাং বেপরোয়া হয়ে উঠে। তাই আমাদের সকলের সচেতন হতে হবে। কোনো স্থানে এমন দৃশ্য দেখলে সাথে সাথে পুলিশকে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জের সাংবাধিকদের উদ্দেশ্যে ওসি বলেন, আমি মনে করি সাংবাদিক পুলিশ ভাই ভাই। পুলিশের একার পক্ষে মাদক নির্মূল করে সম্ভব নয়। সাংবাদিকরা সর্বদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে তুলে ধরেন। তাদের সহযোগিতায় আমি যতদিন আছি মাদক, কিশোর গ্যাং সহ সকল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কাজ করে যেতে চাই।