গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আমরা এক দফার আন্দোলন করছি। পরিষ্কার কথা, আমরা এক দফার আন্দোলন করছি কারণ আমরা ভোট দিতে পারিনি।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণতন্ত্র মঞ্চের আয়োজিত সমাবেশে একথা বলেন তিনি। সরকার ও শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনে ঐক্যবদ্ধ হতে এবং রাজনৈতিক সভা সমাবেশে বাধা, হামলা মামলা, দমন পীড়ন, গুলি হত্যার প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, অনেকে এক দফা নিয়ে ভুলভ্রান্তিতে থাকেন। আমরা কেন আন্দোলন করছি, কারন আমরা ভোট দিতে পারিনি। আমাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এ সরকার এ শাসন ব্যাবস্থার অধীনে ভোটাধিকার অর্জন সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রথম কাজ এ সরকারকে পদত্যাগ করাতে হবে। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। একটি সুষ্ঠু নির্দলীয় সরকার কাঠামো গঠন করতে হবে। এসকল নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেয় তারা তো তারই গোলামি করবে। আইন করে সংবিধান করে ক্ষমতার ভারসাম্য ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই তিন দাবী মিলে একদফা।
তিনি বলেন, এই একদফার তিনটি দিককে কেউ একটু কমাতে চাইলেই বুঝবেন আবারও তারা কৌশলে নতুন স্বৈরাচারী সরকার কায়েম করতে চাচ্ছে।
৫২ বছরে কি দিয়েছে তারা। আজ দেশের মানুষ এ রাজনৈতিক নানা বাতাবরণে আবারও মানুষের কর্তব্য এসেছে। আজ গণজাগরণ সৃষ্টি হচ্ছে। এ গণজাগরণকে আর বিফলে যেতে দেয়া হবে না। আমরা শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে আমরা এ সরকারের পদত্যাগ চাই। জনগণ আন্দোলনের নির্ধারক শক্তি।
অনেকে বলেন আপনারা এ সরকারকে পদত্যাগ করাতে চান কেন। কেন আমরা এ সরকারের পতন চাই। তারা বলেন তারা উন্নয়ন করেছে। উন্নয়ন তো দেখছি। বড় বড় স্থাপনা হচ্ছে। আইয়ুব খানের আমলেও বড় বড় স্থাপনা হয়েছে। এরশাদের আমলেও হয়েছিল। ১৯৭১ সালে নুরুরজ্জামান ৭ নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তিনি যখন দেশে ফিরছেন তখন এক কৃষক তাকে বলছিল আমার তো চোখ নেই। আমার চোখ আমি আপনার অন্তরে দিলাম। আমার চোখ দিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে দেখবেন বাংলাদেশ কতটা বদলেছে। আজ বাংলাদেশের অবস্থা সংবাদমাধ্যমে খবর আসে। আমাদের মহিলারা ওএমএসের লাইনে দাঁড়িয়ে। রাস্তা থেকে কুড়িয়ে তারা চাল সংগ্রহ করছেন। এ হল তাদের অবস্থা। গ্রামে তো অবস্থা আরও ভয়াবহ।
প্রধানমন্ত্রী আপনার উন্নয়ন চৌদ্দ বছরে এসে দুর্ভিক্ষে রুপ নিয়েছে। আপনি বলেছেন আমরা বলিনি। প্রতিদিন রিজার্ভ কমছে। এটা কেন কমছে। এর কারণ আপনার উন্নয়নের নামে বছরে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আট হাজার লেনদেন পেয়েছে যেগুলোকে তারা অস্বাভাবিক বলছে। এদের সাথে সরকারের যোগাযোগ রয়েছে। ডলারের কোষাগার ফাঁকা হয়েছে লুটপাট করে। এমন লুটপাট আগে বাংলাদেশে কখনও ঘটেনি। এ সরকারের আমলে দশ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এ টাকা কার। আপনাদের উন্নয়নে আমাদের আজ এ অবস্থা করেছে।
তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালে তারা কাউকে দাঁড়াতে দেয়নি। ২০১৮ সালে সুষ্ঠু ভোট দেয়ার কথা বলে ডেকে নিলেন। আমরা কী দেখলাম। জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, পুলিশ রাতে ভোট দিয়েছে এমন কথা কোথাও শুনিনি। আমরা সরকারকে বলতে চাই, জাপানের রাষ্ট্রদূতের কথা কী আমরা অস্বীকার করতে পারি। আমরা তো ভোটে দাঁড়িয়েছিলাম। আমরাতো দেখেছি। দেশের মান সম্মান নিয়ে আমরা চিন্তিত আপনারা নন।
আপনারা র্যাবের মত প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক ভাবে হেয় করেছেন। তাদের মুক্তিযুদ্ধের অধিকার হল তারা ক্ষমতায় থাকবে কিন্তু মানুষ ভোট দিতে পারবে না। প্রতিপক্ষকে হাত পা বেধে নিজেরা অস্ত্র নিয়ে পুলিশ নিয়ে তারা বলে খেলা হবে। নির্বাচনে আসেন আমরা আপনাদের হাত পা বাঁধবো না। আমরা সেরকম বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমরা এ দেশকে জমিদারী বানাতে দেব না।
শেখ হাসিনার কাছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিরাপদ না। তাই তাদের পদত্যাগ চাই। তারা ক্ষমতা ছাড়বে না। তারা বলে বিরোধী দল বিদেশিদের কাছে ধরণা দিচ্ছে। আমরা বলি এতদিন বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে স্টিম রোলার চালিয়ে আপনারা ক্ষমতায় টিকেছিলেন। আজ ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভীত হয়ে আছেন।
সাকি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে ধর্মের নামে মুক্তিযুদ্ধের নামে বিভাজিত করতে চায়। আমরা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। আওয়ামী লীগ শুধু বিরোধী দলের নয় নিজ দল ও সমর্থকদের ভোটাধিকারও কেড়ে নিয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি (জেএসডি) আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, ভাষানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।