সকাল নারায়ণগঞ্জ অনলাইন ডেস্কঃ ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে আগত মুসল্লিদের ভীড় টঙ্গী এলাকা ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় ২০০ একর জমিনের ওপর গড়ে ওঠেছে বিশ্ব ইজতেমার খোলা মাঠ।
টঙ্গী ময়দানের চতুর্দিকে যতটুকু চোখ যায় সামিয়ানা খুটি পানির পাম্প বাথরুমসহ আরো হাজারো স্থাপনা রয়েছে। ভাবছেন এই হিসাব কেন দিচ্ছি?
তাহলে শুনুন যারা ইজতেমার আয়োজক তারা কিন্ত কোন শ্রমিক নিয়োগ করেনি। ময়দানের স্থান নির্ধারণ থেকে নিয়ে নলকূপ স্থাপন সামিয়ানা ওযু গোসলের জন্য নির্মিত বাঁশের সাময়িক সেতু, তিনহাজার বাথরুম প্রস্তুতসহ অসংখ্য পয় নিষ্কাশন ব্যবস্থা পর্যন্ত প্রস্তুত করতে কোন নির্মাণ শ্রমিক নিয়োগ দেয়নি।
তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি ফেরেশতারাও করে দেয়নি। সরকার বা গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের নিয়োগ কর্তা দ্বারাও গড়ে উঠেনি এই সাময়িক থাকার বিশাল ফ্লোর। সম্পূর্ণ নির্মাণ হয়েছে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। কীভাবে?
আচ্ছা বলি! তাবলিগের সাথী ভাইদের মাধ্যমে খবর পৌঁছে গেছে আগামী ১০, ১১ ও ১২ তারিখ বিশ্ব ইজতেমা। ময়দানের প্রচুর কাজ। তিন মাস লাগাতার কাজের প্রয়োজন। প্রতিদিন গড়ে ১ থেকে দেড় হাজার লোকের প্রয়োজন মাঠ প্রস্তুতির জন্য। সারাদিনের তাবলিগি মজমাগুলোতে এই আলোচনাও পৌছে গেছে।
পুরো দেশ থেকে লোক প্রস্তুতি নিচ্ছে। আসছে স্বেচ্ছাশ্রম বিলানোর জন্য নিজ খরচে ময়দানে পৌঁছে যাচ্ছে। কেউ একদিন কেউ একাধিক দিনের জন্য চলে এসেছিল ময়দানে। মাঠের দায়িত্বশীলরা যাকে যে কাজ দেন সে সেই কাজই করেছে। কারো মুখে নেই কোন অভিযোগ চোখে নেই অনুযোগ।
কেউ সারাদিন নামাজের কাতার তৈরি করেছেন কেউ বাথরুম কেউ মিম্বার কেউ আবার ওজুখানা কিংবা প্রশ্রাবখানা। এভাবে প্রস্তুত হয়েছে আজকের পুরো ময়দান। স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ হয়েছে তবে কাজে কোনো হাঙ্গামা বিশৃঙ্খলা হয়নি।
কারণ এখানে কাজ হয়েছে আল্লাহর পথে নবীর তরিকায়। যে যে কাজ পারে না, সেও তার ভাগে আসা কাজ করেছে এক এক মনে তনুমন চিত্তে। এখানে আমিরের আদেশ বলে একটি কথা আছে।
হাদিস শরীফে আছে- যে ব্যক্তি আমিরের কথা মান্য করলো সে আমার কথাই মান্য করলো। যে আমার কথা মান্য করলো সে আল্লাহর কথা মান্য করলো।
এই হাদীসের পুঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তবতা আছে তাবলিগের সাথি ভাইদের মাঝে। মূলত একারণেই তাদের মধ্যে এতো বিশাল কাজের বাস্তবায়ন সুন্দর সফলভাবে হয় তাতে কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় না। হয় না কোন নিয়ম বহির্ভূত কাজ। এ ধারা ঠিক আছে বিধায় তাদের মাঝে গড়ে ওঠছে ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম দৃষ্টান্ত।
পৃথিবীর অন্য কোন সামাজিক যুথবদ্ধ কাজে এমন দৃষ্টান্ত পাওয়া যাওয়া কল্পনা বিলাস ছাড়া আর কিছুই না। এভাবে সমাজের সকলের মাঝে স্বেচ্ছাশ্রমের মধ্য দিয়ে ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তুলতে পারলে সমাজ রাষ্ট্র পরিবার সকল ক্ষেত্রে কোরআনি আদর্শ ফুটে ওঠবে।
এই স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতেই তাবলিগের কাজের সূচনা হয়েছে। হজরত ইলিয়াস (র.) তিনি এই চেতনা দিয়ে এই কাজের পদ্ধতি সাজিয়েছেন। যদি এই কাজের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধের ধারা না থাকতো তাহলে হয়তো তাবলিগের কাজ এতো ব্যাপক ও গ্রহণযোগ্য হতো না।
তাবলিগের ভাইদের আচার আচরণ কথাবার্তা চলাফেরা সবকিছুতে অন্যকে প্রাধান্য দিতে পারার মানসিকতা গড়ে ওঠে। এমনতো হাজারো ইতিহাস আছে যে- তাবলিগী ভাইদের আচারণ দেখে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। ভারতীয় নওমুসলিমদের ঈমান জাগানিয়া কাহিনীতে এমন কাহিনী স্থান পেয়েছে গুরুত্বের সঙ্গে।
সাহাবিদের মাঝে যে ভ্রাতৃত্ববোধের রূপ ছিলো আজকের ইজতেমায় তার কিছুটা হলেও আছে বিধায় এধারায় এখনো তাবলিগে এসো মানুষ হেদায়ত পায়। যে জন নিজের মধ্যেও ভ্রাতৃত্ববোধের এই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে তার দ্বারাও আল্লাহ তায়ালা তার দ্বীনের খেদমত নিবেন।
তাবলিগের মেহনতের এই দুটি গুণ জরুরি স্বেচ্ছাশ্রম বিলান ও মিলেমিশে কাজ করা। তাবলিগের উসুলে যেটাকে মাশওয়ারা (পরামর্শ) করে কাজ করা বলে। আমরা যেটাকে ভ্রাতৃত্ববোধ বা পারস্পারিক বন্ধন বলছি। পারস্পারিক এই বন্ধনের ভিত্তি যতো মজবুত হবে দ্বীনের কাজ তার দ্বারা ততো সহজ ও সুখের হবে।
এ কাজের জন্য কাউকে বলতে নেই। যা করার নিজে নিজে নিজ দায়িত্বে করে ফেলা। তাহলে ভ্রাতৃত্বের এই বন্ধন অটুট ও স্থায়ী হবে।
যদি পারস্পারিক সম্পর্কের দরুণ উল্লিখিত বিবরণের মতো হয় তাহলে বুঝতে হবে এটাই আল্লাহর পথ নবীর পথ। যদি এর থেকে ভিন্ন হয়, আর দীনের কাজ না হয় বুঝতে হব এটা আল্লাহ প্রদত্ত নবীর প্রদর্শিত পথ অনুযায়ী হয়নি।
আল্লাহ আমাদের স্বেচ্ছাশ্রমের এই গুণ ও ভ্রাতৃত্ববোধের এই মহাত্ব দান করুক। আমিন।