নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও বন্দরে ডাকাতির সময় সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১। এসময় তাদের কাছ থেকে ২টি চাপাতি, ১টি চাইনিজ কুড়াল, ১টি ছোরা ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১টি বাস জব্দ করা হয়। উদ্ধার করা হয় ডাকাতির শিকার ২ ভিকটিমসহ পণ্যবাহী পিকআপ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা ডাকাতির সাথে তাদের নিজেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- ডাকাত চক্রের সরদার মূসা আলী (৪০), পিতা-আম্বর আলী, সোনারগাঁ, তার সহযোগী নাঈম মিয়া (২৪), পিতা-মোঃ ফারুক, রুপগঞ্জ, শামিম (৩৫), পিতা-চাঁন মিয়া,শিবপুর, নরসিংদী, রনি (২৬), পিতা- মৃত সৈকত, নরসিংদী, আবু সুফিয়ান (২০), পিতা- মৃত সবুজ আলী, রুপগঞ্জ, মামুন (২৪), পিতা- বিল্লাল, রুপগঞ্জ।
র্যাব-১১ আরও জানায়, শুক্রবার (১২ আগস্ট) রাতে রূপগঞ্জের ভ‚লতা গোলাকান্দাইল এশিয়ান হাইওয়েতে র্যাব-১১ এর টহল চলাকালীন সময়ে একটি ডিম বোঝাই পিকআপের সন্দেহজনক গতিবিধি পরিলক্ষিত হলে উক্ত টহল দল পিকআপটি গতিরোধ করে। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে উক্ত পিকআপ থেকে ২ জন ব্যাক্তি পালানোর চেষ্টা করলে তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কথা বার্তায় অসংলগ্ন আচরণ প্রকাশ পাওয়ায় তাদেরকে তল্লাশী করলে তাদের নিকট হতে ১টি চাপাতি ও ১টি চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তারা ডাকাতির উদ্দেশ্যে যুব কল্যান এক্সপ্রেস লিমিটেডের একটি বাসের মাধ্যেমে ভ‚লতা থেকে রূপসী যাওয়ার পথে এশিয়ান হাইওয়েতে ডিমের পিকআপটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য পিকআপের পিছু নেয়। একপর্যায়ে ভ‚লতা-রূপসী সড়কে পিকআপটির সামনে বাস দ্বারা রাস্তা আটকে পিকআপের গতিরোধ করে। এরপর পিকআপের ড্রাইভার ও তার সহকারীকে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক পিকআপটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং ড্রাইভার ও তার সহকারীকে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে মারপিট করে। এবং তাদের সাথে থাকা বাসে উঠিয়ে নেয়। অতঃপর উক্ত ডাকাত দলের সরদার মূসা ও তার প্রধান সহকারী নাঈম পিকআপটি নিয়ে গাউছিয়া-মদনপুরমুখী রাস্তায় নিয়ে যায় এবং ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা পিকআপ এর চালক ও হেলপারকে তাদের সাথে থাকা বাসে করে মদনপুরের দিকে নিয়ে যায়।
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পিকআপের ড্রাইভার ও হেলপারকে উদ্ধারের উদ্দেশ্যে আভিযানিক দলটি মদনপুর পৌঁছায়। পরবর্তীতে বন্দর থানার মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হতে যুব কল্যান এক্সপ্রেস লিমিটেডের বাসটি আটক করতে সক্ষম হয়। এ সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের সদস্যরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে র্যাব সদস্যরা ৪ জন ডাকাতকে আটক করতে সক্ষম হয় এবং অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন ডাকাত বাস থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যায়। উক্ত বাসের ভিতর হতে হাত-পা ও চোখ-মুখ বাধা অবস্থায় পিকআপ এর ড্রাইভার ও তার সহকারীকে উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ১০/১২ জনের সংঘবদ্ধএই ডাকাত চক্রটি বেশ কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায় বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিতভাবে ডাকাতি করে আসছে। তারা পেশায় কেউ গার্মেন্টসকর্মী, ড্রাইভার, হেলপার আবার কেউ রাজমিস্ত্রী ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার। দিনে নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও বিভিন্ন সময় তারা সংঘবদ্ধভাবে দুর্ধর্ষ ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে থাকে।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, এই চক্রটি মূলত ৩টি গ্রæপে বিভক্ত হয়ে ডাকাতি সংঘটন করে এবং ডাকাতির কাজে একটি বাস ব্যবহার করে। গ্রেপ্তারকৃত মূসার নির্দেশে প্রথম গ্রæপটি ডাকাতির জন্য বিভিন্ন গার্মেন্টসের পণ্যবাহী ট্রাক ও মহাসড়কে চলাচলকারী পণ্যবাহী যানবাহন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এবং ডাকাতির জন্য সম্ভ্যাব্য স্থান নির্ধারণ করে। এই দলের সদস্যরা পেশায় গার্মেন্টস কর্মী, ড্রাইভার, হেলপার আবার কেউ রাজমিস্ত্রী ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার। দ্বিতীয় দলটি বাস নিয়ে মহাসড়কে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিয়ে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে।তারামহাসড়কে অবস্থান নিয়ে ডাকাতির জন্য টার্গেটকৃতপণ্যবাহী যানবাহনটির পিছু নেয়। পরবর্তীতে সুবিধাজনক স্থানে টার্গেট করা পণ্যবাহী গাড়ীটিকে বাস দ্বারাগতিরোধ করে এবং দ্রæত পণ্যবাহী গাড়ীর চালক ও হেলপারকে এলোপাথারি মারপিট করে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে বাসে তুলে নেয়।পরবর্তীতে পণ্যবাহী গাড়ীর চালক ও হেলপারকে জিম্মি করে বাসে নিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায় ও তাদের মারপিট করে মুক্তিপণ দাবী করে এবং ডাকাতি শেষে পরবর্তীতে তাদের হাত-পা ও চোখ-মুখ বাধাঁ অবস্থায় মহাসড়কের নির্জন স্থানে ফেলে দেয়। তৃতীয় দলটির নেতৃত্বে থাকা ডাকাত দলের প্রধান মূসাডাকাতিকৃত পণ্যবাহী গাড়ীটি চালিয়ে ডাকাতিকৃত পণ্য বিক্রি করার জন্য পূর্ব নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায় এবং মালামাল আনলোড করে। এছাড়াও, ডাকাত দলটি পণ্যবাহী গাড়িটি সুবিধাজনক স্থানে বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করে অথবা ব্যর্থ হলে পরিত্যাক্ত অবস্থায় কোন নির্জন স্থানে ফেলে যায়। বিগত ১ বছর ধরে যুব কল্যাণ এক্সপ্রেস লিঃ এর বাসটি দিয়ে তারা বেশ কয়েকটি ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে। পূর্বে তারা অন্যান্য বাস অথবা পিকআপ দিয়ে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করত।
গ্রেপ্তারকৃত মূসাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে উক্ত ডাকাত চক্রের মূল হোতা। সে বিগত ১০/১২ বছর যাবৎ বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতি করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়াঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা- সিলেট মহাসড়কে বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা তার নেতৃত্বে সংঘঠিত হয়েছে এবং প্রত্যেকটি ডাকাতিতে সে নিজে স্বশরীরে অংশগ্রহণ করে। তার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে ডাকাতির মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করেছে।
গ্রেপ্তারকৃত শামিম ডাকাত সর্দার মূসার প্রধান সহযোগী এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বাসটির চালক। বিগত ২০০৬ সালে স্ত্রীর হত্যার দায়ে সে ৭ বছর কারাভোগ করে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।