সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
৩০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এইদিন নারায়ণগেঞ্জর রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে আসে শোকবহ একটি দিন। এই দিনে আমাদেরকে ছেড়ে চলে যান গণমানুষের নেতা নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু নাসিম ওসমান। যে কিনা তার জীবনের প্রতিটি সময় ব্যয় করেছেন মানুষের দুঃখ কষ্ট নিবারণের জন্য। জীবনের সবকিছু উৎসর্গ করেছেন সাধারণ মানুষেদের জন্য। প্রতিবাদ করেছেন সবরকম অন্যায়ের বিরুদ্ধে।নাসিম ওসমান ১৯৫৩ সালের ৩১ শে জুলাই জন্মগ্রহন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলার বিখ্যত পরিবার ওসমান পরিবারে। যে পরিবার থেকে বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রামের বিরুদ্ধে রেখে গেছে অনন্য অবদান।
রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হওয়ায় ছোট বেলা থেকেই সাংগঠনিক কর্মকান্ডে ছিলেন আসক্ত। সব সময় মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকার চেষ্টা করতেন। জনগনের সমস্যা সব সময় নিজের সমস্যা মনে করে সমাধান করার চেষ্টা করে যেতেন। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি ছিলেন সাহসী ও প্রতিবাদী কন্ঠোস্বর। ১৯৭১ সালে তিনি দেশকে স্বাধীন করার জন্য পরিবার পরিজন ফেলে কাউকে কিছু না ভারতের দেবাদুনে সেখানে আত্মঘাতী প্রশিক্ষন নেন। প্রশিক্ষন শেষে দেশে এসে পাকবাহিনীদের উপর ক্ষুর্ধাত হায়নার মত যাপিয়ে পরেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি বীরের ভেসে বাড়িতে ফেরেন। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সাথে তাদের পরিবারের সু-সম্পর্ক বজায় থাকায় শেখ মুজিবুর রহমানকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন এবং মিশতে পেরেছেন। তাই তার আর্দশকে বুকে লালন করে কেটে গেছে নাসিম ওসমানের রাজনৈতিক জীবন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার একদিন আগে ১৪ আগস্ট বিয়ে করেছিল নাসিম ওসমান। সেই বিয়েতে উপস্থিত ছিলো বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালসহ অনেকেই। পর দিন বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর শুনে নবদম্পতীসহ পরিবারের কারও দিকে তাকান নি তিনি।
বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে সবাইকে ছেড়ে ঢাকায় প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। যোগ দেন কাদেরীয়া বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেন সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে। ঢাকায় প্রতিরোধ গড়তে ব্যর্থ হলে পরে ভারতে গিয়ে খুনীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে সবাইকে সংগঠিত করার চেষ্টা করেন। নাসিম ওসমানের প্রথম দিকের রাজনৈতিক সময় কেটেছে আওয়মালীগে। পরবতর্ীতে তিনি জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে পরেন। নাসিম ওসমান এমন একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন শত প্রতিকূলতার মাঝেও ভেঙ্গে পড়েননি করে গেছেন মানুষের সেবা। জাতীয় পাটির প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়া স্বত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর শুধু একনিষ্ট ভক্তই ছিলেন না বরং জাতীয় পার্টির সভায় প্রকাশ্যে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে তার বক্তব্য শেষ করতেন। তিনি জাতীয় পার্টির হয়ে ১৯৮৬,১৯৮৮, ১৯৯৮ এবং ২০১৪ সালে ৪ বার সাংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন । সাদা মনের মানুষ হিসাবে পরিচিত নাসিম ওসমান। তার কাছে কোন নেতাতো দূরের কথা কোন কর্মী খালি হাতে ফিরেনি। নাসিম ওসমান নারায়ণগঞ্জকে একটি আধুনিক নগরীতে পরিনত করতে চেয়েছিলেন।
করে গেছেন নারায়ণগঞ্জ এর মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ন কিছু উন্নয়ন মূলক কাজ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল,ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড,বঙ্গবন্ধু সড়কের সংস্কার,শহরে সোডিয়াম বাতি লাগানো,নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সৃষ্টিতে তার বিরাট ভূমিকা রেখেছেন এবং নারায়ণগঞ্জের নদীর পূর্ব পারে অবস্থিত বন্দর উপজেলাটি ছিল অবহেলিত।শহরের উন্নয়নের পাশাপাশি বন্দরের উন্নয়নে বেশি গুরুত্ব দেন। বন্দরের বেশ কিছু রাস্তাঘাট, মসজিদ, মন্দির, স্কুল-কলেজ উন্নয়ন করেন। শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মানে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করে গেছেন নাসিম ওসমান । বার বার শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মানকাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হলেও একটি বিশেষ মহল বার বার শীতলক্ষা সেতুর নির্মানকাজ বন্ধে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘদীন পরে হলেও শীতলক্ষা সেতুর নির্মানকাজ শুরুহয়েছে। নাসিম ওসমান শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ের পরিবর্তন ঘটান। যার ফসল এখন বন্দরবাসী ভোগ করছে। এসব উন্নয়ন দ্বারাই সদর-বন্দর আসনের মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
২০১৩ সালের নির্বাচনে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পিছনে রাজনৈতিক কারিশমা দেখিয়ে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দুরে রাখতে প্রয়াত নাসিম ওসমানের ভুমিকা ছিল অপরিসীম। ২০১৪ সালের ১৮ এপ্রিল চিকিৎসার জন্য নাসিম ওসমানকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। দিল্লিতে চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি দেরাদুন যান। সেখানে একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থানকালে আকস্মিক হৃদেরাগে আক্রান্ত হলে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি ৩০ এপ্রিল ২০১৪ সালে মারা যান।
সাংসদ নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর তার লাশ গ্রহণ থেকে শুরু করে দাফন পর্যন্ত একজন প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল । এমনকি প্রধানমন্ত্রী সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রয়াত নাসিম ওসমানের প্রতি স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে সাংসদ নাসিম ওসমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত নাসিম ওসমানের উপর আনিত শোক প্রস্তাবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি। তিনি সংসদে দাড়িয়ে ওসমান পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। নাসিম ওসমান নারায়ণগঞ্জবাসীর বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষের হৃদয়ে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন। তার শত্রু ভাবাপন্ন মানুষও এখন নাসিম ওসমানের কর্মময় জীবন নিয়ে আলাপকালে স্বীকার করে আসলেই নাসিম ওসমান একজন সরল মনের মানুষ ছিল। নাসিম ওসমান ছিলেন সাধারণ মানুষের নেতা। তিনি রাজনীতি করতেন এবং প্রতিপক্ষ রাজনীতিবীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতেন।
তার ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে সকাল নারায়ণগঞ্জ অনলাইন পোর্টালের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি।