সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
করোনাভাইরাস যেন গোটা বিশ্বকে বদলে দিয়েছে। বদলে যাচ্ছে মানুষের আচার-আচরণ ও। সংক্রমিত হয়ে প্রাণ হারানোর ভয়ে কমে যাচ্ছে মানবিক বোধও। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের ভয়ে কেউ পাশেও যাচ্ছিল না।
করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া এক মহিলার লাশ শ্মশানে নিতে কেউ এগিয়ে এল না। পরিবারের আপনজনেরা ভয়ে কাছে যাননি। মহিলার লাশটি খাটের উপর পড়ে ছিল। মরদেহটিকে শ্মশানে নিয়ে যাবে কে? তাকে ¯স্নান করাবে কে? দাহ- কে করবে? পরিবারের কেউ সাহস করেনি। তবে সেই সময়ই একটা ফোন করেছিল সফিউদ্দিন প্রধানের মুঠোফোনে। ফোন পেয়েই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সফিউদ্দিন প্রধান তার স্বেচ্ছাসেবী সহকর্মীদের নিয়ে ওই মহিলার মরদেহ আনতে যান তিনি।
তারা মরদেহটি খাট থেকে নামিয়ে বাইওে নিয়ে আসেন। শ্মশানে নিয়ে গিয়ে লাশের সৎকার করেন তিনি। এতে তিনি এক মহৎ মানবিকতার পরিচয় দেন। যা অন্য সকলের জন্য দৃষ্টান্তমূলক, শিক্ষামূলক। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সফিউদ্দিন প্রধান পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
তারপর যা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে সবাই জেনেছেন। ঘটনাটি ঘটে নারায়নগঞ্জের ১৪ নং ওয়ার্ডের নন্দীপাড়া এলাকায় মৃত. সমীর করে বাড়িতে। মৃত মহিলাটির নাম শিল্পী তিনি নন্দীপাড়া এলাকার সমীর করের বাড়ির ভাড়াটিয়া । করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করায় তার লাশ শ্মশানের নেওয়ার জন্য পাড়া প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজনসহ কেউই এগিয়ে আসেননি। সফিউদ্দিন প্রধান সকাল নারায়নগঞ্জকে বলেন, মৃত শিল্পী রানীর স্বামী বিমলের ফোনে সকাল ৭ টায় আমার ঘুম ভাঙ্গে। বিমল ফোন দিয়ে বলে তার স্ত্রী শিল্পী মারা গেছে।
সে বেশ কিছুদিন যাবৎ তার স্ত্রী ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্টে ভুগতেছিল। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে করোনা পরীক্ষা করা হলে চিকিৎসক তাকে করোনা রোগে আক্রান্ত। আজ সকাল ৫ টায় সে মারা যায়। আমি সাথে সাথে তার বাসায় গিয়ে দেখা করে সকল আত্মীয় স্বজনদের খবর দিতে বলি আর কোন প্রয়োজন হলে আমাকে জানাতে বলে বাসায় চলে আসি। কিছুক্ষণ পর বিমল ফোন করে বলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় কেউ এগিয়ে আসছে না।
এ কথা শুনে আমি মসজিদের মাইকে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানালে কেউই এগিয়ে আসেনি। তখন আমি আমার ৮/১০ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবীদল নিয়ে লাশটিকে বাড়ি থেকে নামিয়ে সিটি কর্পোরেশনের দেওয়া ব্যাগে করে লাশটি নিয়ে শ্বশানে চলে গেলাম এবং লাশটিকে দাহের কাজ সম্পন্ন করলাম। আমি ছাড়াও আমার স্বেচ্ছাসেবী দলের সিরাজ, মামুন,ওবায়দুল জামান, তুহিন, আকাশ এবং শুকুর সহ ৮/১০ জন ছিল।