সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়নগঞ্জবাসী সবসময়ই নববর্ষের এই দিনটিকে নিয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠে। কিন্তু এবার করোনার কারণে বৈশাখী উৎসব, চড়ক মেলা কিংবা হালখাতাকে না বলা হয়েছে। ঘরে বসেই পালন করা হয়েছে চৈত্র সংক্রান্তি।
পুরনো রীতি অনুয়ায়ী নারায়নগঞ্জের অনেক জায়গাতে লোকজন চৈত্র সংক্রান্তির সকালে গতকাল সোমবার তিতা জাতীয় (ভাটির পাতার রস, জাত নিমের পাতার রস, নীলতাতের রস) খাবার গ্রহণ করেন। তাদের বিশ্বাস, এতে সারা বছর ধরে শরীরে কোনো রোগ-বালাই হবে না। এছাড়া খেসারি, মসুর, ছোলা জাতীয় কলাই ভেজে চিবিয়ে খাওয়া হয়। বিষয়টি মূলত দাতকে শক্তিশালী করার জন্য।
আজ পহেলা বৈশাখে ভালো খাবার, ভালো কাপড় পরা, ঝগড়াঝাটি না করা, কারো সঙ্গে লেনদেন না করাসহ নানা নিয়ম মেনে চলার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। এতে বছরজুড়ে ভালো থাকা যাবে-এই বিশ্বাস থেকেই পহেলা বৈশাখে নারায়নগঞ্জের মানুষ পুরনো রীতি মেনে চলেন।
সরেজমিনে নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পহেলা বৈশাখ বাংলা বর্ষবরণে নারায়নগঞ্জের কোথাও নেই কোনো প্রস্তুতি। করোনা মোকাবেলায় মানুষ সব ঘরবন্দি, রয়েছেন নানান সংকটে। অন্যান্য বছর যদিও প্রাণের এই উৎসবের প্রস্তুতি চলে অনেক আগে থেকেই। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বত্র বিরাজ করে বৈশাখী আমেজ।
দিবসটি উদযাপনে বৈশাখী মেলা, গ্রামীণ খেলা, পান্তা-ইলিশের আয়োজন, হালখাতা. শোভাযাত্রাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলতো বিভিন্ন স্থানে। নতুন বছরের প্রথম দিনে হালখাতা উৎসবে বকেয়া অর্থের পুরোটা বা আংশিক পরিশোধ করে হালখাতা বা নতুন খাতায় নাম লেখা হতো। তার মধ্যে অবশ্য আনন্দের উপকরণও ছিল। হালখাতা উপলক্ষ্যে খাওয়া-দাওয়া বিশেষ করে মিষ্টান্ন বিতরণের রেওয়াজ ছিল। সেই রীতি অনুসরণ করে নারায়নগঞ্জের ব্যবসায়ীরা পহেলা বৈশাখে বাড়ি কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হালখাতার আয়োজন করতো। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের আপ্যায়নে বাড়িতে তৈরি করা হয় মণ্ডা-মিঠাইসহ হরেক রকম খাবারের জিনিস। রীতি অনুযায়ী এবারে সেই হালখাতা অনুষ্ঠান করতে না পারায় ভবিষ্যতে ব্যবসা চালানো নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখে নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় মেলার আয়োজন অনেক পুরনো রীতি। সামাজিক সম্প্রীতি সৃষ্টির ক্ষেত্রে এই পারস্পরিক যোগাযোগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
তবে এবছরই প্রথম করোনা আতঙ্কে না বলতে হয়েছে বাঙ্গালীর প্রাণের এই উৎসবকে। তবু ঘরে বসেই মানুষ পুরনো দিনের রীতি অনুসরণ করে আজ মঙ্গলবার পহেলা বৈশাখ বরণ করছেনা বাংলা নববর্ষকে, প্রার্থনা করছেন যেন নতুন বছর সবার জীবনে বয়ে আসে সুখের বার্তা।