সকাল নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় একটি আড়ৎ দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ছয়জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) উপজেলার গোলাকান্দাইল বাসস্ট্যান্ডে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে টানা তিনঘন্টা থেমে থেমে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ চলাকালীন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
এই সময় অনলাইন ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ও সেলিম প্রধানের ঘনিষ্ঠ নেতা-কর্মীরা এ সংঘর্ষে জড়ান। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম এবং ছাত্রদলের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মাসুদুর রহমান। উভয়পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছুড়েছেন।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে ছাত্রদল কর্মী রাফি আহমেদ ও রাজু ভূঁইয়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানিয়েছেন মাসুদুর রহমান।
এছাড়া, আহতদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবকদল কর্মী মো. ইমন, মো. রফিকুল ইসলাম, রুহুল আমিন, মনির হোসেন, ইয়ার হোসেন, তরিকুল ইসলাম, বিনয় বাবু, নুরুল ইসলাম ও মো. রাজু স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী স্লোগান দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি মহাসড়কের পাশে সেলিম প্রধানের বাড়ির দিকে গেলে সেখানে থাকা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সাথে সংঘর্ষ বাধে। পরে থেমে থেমে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। সেলিম প্রধানের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। এতে বাড়ির ভেতর ও বাইরে থাকা কয়েকটি যানবাহন পুড়ে যায়।
সংঘর্ষের সময় মুহুর্মুহু গুলি ও হাতবোমা বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় লোকজন ও পথচারীরা। মহাসড়কের দুই পাশের ব্যবসায়ীরা দোকান-পাট বন্ধ করে নিরাপদে আশ্রয়ে চলে যান।
স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রফিকুলের দাবি, তাদের সন্ত্রাসবিরোধী মিছিলকে লক্ষ্য করে সেলিম প্রধানের বাড়ির ছাদ থেকে গুলি করা হয়। পরে স্থানীয় উত্তেজিত জনতা সেলিম প্রধানের বাড়ির সামনে থাকা কিছু যানবাহনে আগুন দেয়।
এদিকে, ছাত্রদল নেতা মুসুদুর রহমানের অভিযোগ, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সেলিম প্রধানের বাড়ি দখল করতে আসে। এ সময় তার অনুসারী ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ওই বাড়ির ছেতরে ছিলেন। বাড়ি দখলে বাধা দিলে তাদের উপর হামলা করা হয়।
এই ঘটনায় তাদের অন্তত ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি এ ছাত্রদল নেতার।
স্থানীয়রা জানান, গোলাকান্দাইল এলাকায় একটি আড়তের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেলিম প্রধান নিজে এই আড়তের জমির মালিকানা দাবি করলেও এটি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এটি দখলে নেন বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়ার অনুসারী লোকজন। গত সোমবার মালিকানা ফেরত পেতে এলাকায় একটি মানববন্ধনের আয়োজন করেন সেলিম। সেখানে স্থানীয় কয়েকজন ছাত্রদল নেতাও সেলিমের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন।
সেলিম প্রধানের অভিযোগ, অনলাইন ক্যাসিনোকাণ্ডে তার নাম আসার পর তিনি গ্রেপ্তার হলে আড়তের ১৬ বিঘা জমি দখলে নেন রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ও তার অনুসারী লোকজন। এখনও আড়তটি হাবিবুরের ভাতিজা আইয়ুব খান ও আওয়ামী লীগ নেতা মজিবুর রহমানের দখলে রয়েছে। তাদের সহযোগিতা করছেন বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়ার অনুসারীরা।
“জেল থেকে বেরিয়ে আমি জমি ফেরত চাইলে আমার বাড়িতে তারা হামলাও করে। এবারও জমি ফেরত চেয়ে মানববন্ধন করায় আমার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। গুলি ও বোমা ছুড়েছে।”
এই ঘটনায় তিনি মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন সেলিম প্রধান।
যদিও আড়তের তত্ত্বাবধানে থাকা আইয়ুব খানের দাবি, সংঘর্ষের ঘটনার সাথে আড়তের কোনো সম্পর্ক নেই।
“সেলিম প্রধানের বাড়ি থেকে একদল সন্ত্রাসী স্বেচ্ছাসেবক দলের একটি মিছিলে গুলি চালায়। এ নিয়ে সেখানে সংঘর্ষ বাঁধে বলে শুনেছি”, দাবি করেন আইয়ুব।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (‘গ’ সার্কেল) মেহেদী ইসলাম বলেন, “একটি আড়ত নিয়ে সেলিম প্রধান ও মজিবুর ভূঁইয়ার মধ্যে বিরোধ। এ নিয়েই সংঘর্ষের সূত্রপাত বলে আমরা জানতে পেরেছি। সংঘর্ষে গুলি ও হাতবোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।”
ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ১০ রাউন্ড গুলির খোসা ও একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেও কাজ শুরু করেছি।”
তবে, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত এই ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি।