ইউক্রেনের পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলে জ্বালানি অবকাঠামোতে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার মধ্যরাতে এ হামলা চালানো হয়েছে। শনিবার ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রণালয় হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গত তিন মাসের মধ্যে এ নিয়ে অষ্টমবারের মতো ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠোমোতে বড় হামলা চালাল রাশিয়া।
রুশ আক্রমণে ঝাপোরিঝিয়া ও লভিভ অঞ্চলে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোর অনেক সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির জ্বালানি মন্ত্রণালয়। এছাড়াও হামলায় দুই কর্মচারী আহত হয়েছেন। তাদের ঝাপোরিঝিয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাতভর রাশিয়ার হামলায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ জ্বালানি অবকাঠামোর বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হামলায় সাত কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় বেসরকারি জ্বালানি কোম্পানি ডিটিইকে বলেছে, রুশ হামলায় তাদের একটি প্ল্যান্টে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া।
ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রগুলো পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোর অর্ধেকই ধ্বংস হয়ে গেছে। জেলেনস্কি চলতি সপ্তাহের শুরুতে জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সব হাসপাতাল এবং স্কুলগুলোয় যত দ্রুত সম্ভব সোলার প্যানেল চালু করা হবে। তিনি আরও বলেছেন, তাপ ও বিদ্যু অবকাঠামোতে হামলা চালিয়ে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করার জন্য রাশিয়ার যে প্রচেষ্টা তা ব্যর্থ করতে আমরা সবকিছু করে যাব। ইউক্রেনের মিত্রদের তার দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রক্ষার জন্য আরও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠানোর জন্য অনুরোধও জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রগুলো পঙ্গু করে দিচ্ছে। শুধু জ্বালনি অবকাঠামোই নয়, একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহরও হারাতে বসেছে ইউক্রেন। ইতোমধ্যেই পূর্ব ইউক্রেনের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর চাসিভ ইয়ারের চারপাশে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে কিয়েভ। শহরটিকে রক্ষা করতে নিয়োজিত ইউক্রেনীয় সামরিক ইউনিট এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (স্থানীয় সময়) ইউক্রেনের ২৪তম যান্ত্রিক ব্রিগেডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের চাসিভ ইয়ার শহরে পাঠানো হয়েছে। কারণ সেখানে তুমুল আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। পৃথকভাবে দোনেৎস্কোর দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সেলিডোদের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাশিয়ার বিমান হামলায় দুজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। আঞ্চলিক গভর্নর ওই অঞ্চল থেকে বেসামরিকদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউক্রেন জানিয়েছে, চাসিভ ইয়ার শহর ও এর আশপাশের পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন। রাশিয়া ক্রমাগত সামনের দিকে এগোচ্ছে ও ব্যাপক সম্মুখ আক্রমণ করছে। যুদ্ধ শুরুর আগে পাহাড়ি এই শহরটিতে প্রায় ১২ হাজার মানুষ বসবাস করত। ধারণা করা হচ্ছে, এই শহরের নিয়ন্ত্রণ হারালে এর কাছাকাছি ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য শহর আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। বেশ কিছু শহর সহজেই রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।
এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, পারমাণবিক অস্ত্রের বিকাশ অব্যাহত রাখবে রাশিয়া। ইউক্রেনে যুদ্ধরত সেনাবাহিনীকে সর্বাধুনিক অস্ত্র ও ড্রোন সরবরাহ করতে পরমাণু অস্ত্র বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার ক্রেমলিনে সামরিক, পুলিশ ও গোয়েন্দা পরিষেবা একাডেমির স্নাতকদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন পুতিন।
প্রেসিডেন্ট পুতিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়লে রাশিয়া নিজেকে রক্ষা করার জন্য যে কোনো উপায় অবলম্বন করবে। সদ্য গ্র্যাজুয়েট হওয়া সামরিক বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে প্রেসিডেন্ট পুতিন আরও বলেছেন, বিশ্বে ক্ষমতার ভারসাম্য ধরে রাখা এবং রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য পরমাণু হচ্ছে প্রাথমিক গ্যারান্টার এবং আমরা সব পরমাণু অস্ত্র আরও উন্নত করার পরিকল্পনা নিয়েছি। এ বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বকে বার্তা দেওয়ার জন্য ক্রেমলিন গত মাসে রুশ বাহিনীকে সামরিক মহড়া চালানোর নির্দেশ দেয়। তবে ওই মহড়ায় কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করা হয়নি।
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে পরাজিত করার জন্য আমেরিকা এবং পশ্চিমা বিশ্ব নিয়মিতভাবে কিয়েভকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। তবে পশ্চিমা দেশগুলো দাবি করছে, তারা যুদ্ধের কোনো পক্ষ নয়।