সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
মদিনা জিয়ারতের মাধ্যমে মুমিনেরা প্রশান্তি লাভ করে থাকেন। মুমিনেরা রাসূলের সান্নিধ্যে গিয়ে এক ধরনের স্বস্তিবোধ করেন।
মহানবির রওজার পাশে দাঁড়িয়ে সালাম জানানো, সে এক অন্য রকম অনুভূতি। মহানবি (সা.) রওজা পাক থেকে সরাসরি উম্মতের সালাম গ্রহণ করে থাকেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর নবির প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁহার ফেরেশতারাও নবির জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে মুমিনরা! তোমরাও নবির জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর ও তাহাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও’ (সূরা আহজাব : ৫৬)। মদিনার নিরাপত্তায় কুদরতি ফেরেশতারা নিয়োজিত রয়েছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মদিনার প্রবেশ পথগুলোতে ফেরেশতারা প্রহরায় নিয়োজিত থাকে। সেখানে মহামারি বা দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারে না’ (বোখারি : ১৭৫৯)।
কোনো বান্দা মদিনায় গিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে, আল্লাহ ওই বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাহারা নিজেদের প্রতি জুলুম করে তখন তাহারা আপনার নিকট আসিলে ও আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিলে এবং আপনি তাহাদের জন্য ক্ষমা চাহিলে তাহারা আল্লাহকে ক্ষমাপরবশ ও পরম দয়ালু হিসাবে পাবে’ (সূরা নিসা : ৬৪)।
রাসূলের রওজা ও মিম্বরের মধ্যখানের জায়গাকে রিয়াদুল জান্নাহ বলা হয়। মহানবি (সা.) রিয়াদুল জান্নাহকে জান্নাতের অংশ হিসাবে ঘোষণা করেছেন। মুমিনের সর্বোচ্চ পুরস্কার জান্নাতের অংশ স্বচক্ষে দেখা অত্যন্ত সৌভাগ্যের ব্যাপার। মদিনা জিয়ারতকারীরা রিয়াদুল জান্নাহর মধ্যে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে থাকেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমার ঘর ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান বেহেশতের বাগানগুলোর অন্যতম’ (বোখারি : ১৭৬৭)।
শেষ জামানায় ধর্মীয় বিধি-বিধান পালনে পারস্পরিক মতানৈক্যের কথা বহু আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। যখন মানুষ নানা ধরনের ফেতনায় জড়িয়ে পড়বে, তখন মানুষের ইমান মদিনামুখী হয়ে যাবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ইমান (শেষ পর্যন্ত) এমনভাবে মদিনায় ফিরে আসবে যেমন সাপ তার গর্তে প্রত্যাবর্তন করে’ (বোখারি : ১৭৫৫)।
মহানবি (সা.)-এর আগমনের আগে মদিনার নাম ছিল ইয়াসরিব। যা মানুষের দুঃখ-দুর্দশার জায়গা হিসাবে পরিচিতি ছিল। রাসূলের মর্যাদার খাতিরে আল্লাহতায়ালা মদিনাবাসীর অভাব অনটন দূর করে দিয়েছিলেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মদিনার কংকরময় ভূমির মধ্যবর্তী স্থানকে আমার কথা দ্বারা সম্মানিত করা হয়েছে’ (বোখারি : ১৭৪৮)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি এমন একটি জনপদে হিজরত করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি, যা সব জনপদের ওপর বিজয়ী হবে। লোকেরা তাকে ইয়াসরিব বলে থাকে। অথচ তার (আসল নাম) মদিনা। এ মদিনা খারাপ লোকদের এমনভাবে বহিষ্কার করে দেয়, যেমনভাবে কর্মকারের হাতুড়ি লোহার ময়লা দূর করে থাকে’ (বোখারি : ১৭৫২)।
মদিনায় রাসূলের রওজা শরিফ ছাড়াও অনেক বরকতময় স্থান রয়েছে। জান্নাতুল বাকী, শোহাদায়ে উহুদ, মসজিদে কুবা, মসজিদে কেবলাতাইন, বীরে আলী, বীরে শিফা, বীরে গারস, বীরে রাওহা, বীরে উসমান, মসজিদে খন্দক, মসজিদে বেলাল, মসজিদে জুমা, মসজিদে ইজাবা, মসজিদে গামামা, মসজিদে আবু বকর, মসজিদে ওসমান, মসজিদে ওমর, জাবালে চিলা, সালমান ফারসির খেজুর বাগান ইত্যাদি। আল্লাহতায়ালা মদিনা জিয়ারতের তৌফিক দান করুন।