সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
গার্মেন্টস শ্রমিক অভ্যূত্থান দিবস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের দিনব্যাপী কর্মসূচিতে আজ সকাল ৭.৩০ টায় বিসিক ২ নং গলিতে সমাবেশ ও মিছিল ও শহিদ আমজাদ হোসেন কামাল পেনটেক্স ড্রেস লিমিটেড এর সামনে যেস্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন সেখানে সংগ্রাম পরিষদ এবং অন্তর্ভূক্ত ফেডারেশনসমূহ পুষ্পমাল্য অর্পন করে। বিকাল ৩ টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সভাপতি এড.মন্টুু ঘোষ, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় নেতা হাফিজুল ইসলাম , সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন জেলার সভাপতি হাফিজুর রহমান, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র জেলার সভাপতি আব্দুল হাই শরীফ, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আবু হাসান টিপু, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অঞ্জন দাস, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতি নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি শহীদুল ইসলাম নান্নু, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন জেলার সাধারণ সম্পাদক এইচ রবিউল চৌধুরী, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতরি জেলার সাধারণ সম্পাদক আবদুল আল মামুন প্রমুখ ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০০৩ সালের ৩ নভেম্বর ফতুল্লা বিসিকের পেনটেক্স ড্রেস লিঃ এর শ্রমিকদের আটঘণ্টা কর্মদিবস, ওভারটাইমের দ্বিগুন মজুরি, বছরে ২টি উৎসব বোনাসসহ ১৮ দফা দাবির আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালিয়ে আমজাদ হোসেন কামালকে হত্যা এবং ২ শতাধিক শ্রমিককে আহত করে।
শ্রমিক হত্যায় আন্দোলন বিসিক তথা সারা নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনে রূপ নেয় এবং বিকেএমইএ শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়ে চুক্তি করতে বাধ্য হয়। এরপর থেকে ৩ নভেম্বর দিবসটি গার্মেন্টস শ্রমিক অভ্যূত্থান দিবস হিসাবে পালিত হয়।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের উচ্চমূল্যে শ্রমিকের জীবন বিপর্যস্ত। ইতোমধ্যে শ্রমিকেরা খাদ্য তালিকা থেকে অনেক খাদ্য বাদ দিয়েছে। সরকার জিনিসপত্রের দাম কমাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এ অবস্থায় শ্রমিকের মজুরি বাড়ানো যুক্তিসঙ্গত।
গার্মেন্টসে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ৬ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মজুরি ঘোষণা করে নাই। বিভিন্ন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ২৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা মজুরি দাবি করা হয়েছে। কিন্তু মজুরি বোর্ডের সভায় মালিক প্রতিনিধি মাত্র ১০,৪০০ টাকা মজুরি প্রস্তাব করে। যা অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রমিকের সাথে তামাশা করার শামিল।
মালিকদের এই প্রস্তাবের পর থেকেই গাজীপুর, সাভার-আশুলিয়া, মিরপুরে শ্রমিকরা বিক্ষোভে ফেটে পরে। বিভিন্ন কারখানা থেকে শ্রমিকরা ২৩ হাজার টাকা মজুরি ঘোষণার দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। পুলিশ গুলি চালিয়ে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করছে। গাজীপুরে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করে রাসেল ও ইমরান নামে দুইজন শ্রমিক।
দমনপীড়ন চালিয়ে আন্দোলন দমানো যাবে না। বাজার দর বিবেচনায় নিয়ে অবিলম্বে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি করতে হবে। শ্রমিকের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে গুলি চালিয়ে শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন শ্রম আইন সংশোধনের বিল সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। শ্রমিক সংগঠনসমূহের প্রস্তাব উপেক্ষা করে মালিকদের সুবিধামত তাদের প্রস্তাবে সরকার শ্রম আইনের কতিপয় ক্ষেত্রে ধারা সংশোধনের বিল উত্থাপন করেছে। এ সংশোধনীতে শ্রমিকের কোন উপকার হবে না।
নেতৃবৃন্দ শ্রম আইনের ১৩,১৬,২০,২৩,২৬,২৭ সহ শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী সকল ধারা বাতিল করে গনতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়নের দাবি জানান এবং আমজাদ হোসেন কামালের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে মজুরি বৃদ্ধিসহ শ্রমিকের দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহŸান জানান।