সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান এমপি বলেছেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাসী-অগ্নিদানবদের ঠাঁই নাই।
শেখ রাসেল-এর মত নিষ্পাপ শিশুকে যারা হত্যা করতে পারে, তারা আর যাই হোক কখনো দেশপ্রেমিক বা মানবিক হতে পারে না। তিনি দৈনিক পূর্বাভাস-এর আয়োজনে শেখ রাসেল-এর ৬০ তম জন্মদিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেল এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সহ-সভঅপতি লায়ন তাজ উদ্দিন জুয়েল ও সুলতান আহমদ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ফেরদৌসী আক্তার রেহানা।
বক্তব্য রাখেন শিক্ষাজন-কবি আহমদ আল কবির চৌধুরী, সাংবাদিক সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি, সংবাদযোদ্ধা রক্সী খান, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক কিরণ মাহমুদ ওয়ার্সি, জাতীয় সাংবাদিক সোসাইটির মহাসচিব নাসির উদ্দিন বুলবুল, পর্যটক এলিজা বিনতে এলাহী, সমাজসেবক মাহে আলম ঢালী, এবং সংবাদকর্মী ও কণ্ঠশিল্পী মো. জাহাঙ্গীর রনি। দৈনিক পূর্বাভাস-এর প্রধান সম্পাদক আইয়ুব রানার স্বাগত বক্তব্যর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এ আয়োজনে দৈনিক পূর্বাভাস-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোমিন মেহেদীর রচিত দীর্ঘ কবিতা আবৃত্তি করেন যুগ্ম সম্পাদক শান্তা ফারজানা। বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে বুধবার সকালে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম।
১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে ৭৫-এর ১৫ আগস্ট দশটি বছর শেখ রাসেলের জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা যেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, স্বাধিকার আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার বঙ্গবন্ধুর এক ঐতিহাসিক অধ্যায়। দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার পথে অগ্রযাত্রা, আর রাসেলের বেড়ে ওঠা-সমান্তরাল পথচলা। বাঙালি জাতির জেগে ওঠা এবং মুক্তিসংগ্রামের প্রতীকী শিশু শেখ রাসেল। রাসেল তার জীবনের প্রথম ৭ বছর মুক্তিসংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে ব্যস্ত পিতার সঙ্গ থেকে বঞ্চিত ছিল। রাষ্ট্রপতির ছেলে হয়েও সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেত। রান্নাঘরে গৃহকর্মীদের সঙ্গে বসে ভাত খেতে পছন্দ করত। নিজের হাতে খাবার দিত পোষা কবুতরকে। মুরগি জবাই হলে রক্ত দেখে ভয় পেত। নিবিষ্টমনে অঙ্ক কষত গৃহশিক্ষিকার কথামতো। টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার সময় গ্রামের বন্ধুদের জন্য পোশাক নিয়ে যাওয়ার বায়না ধরত।
রাসেলের জন্মের পর বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে জেলবাস করেছেন। তাই শিশু রাসেলের বাবার সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ খুব কমই হয়েছে। রাসেলের সবচেয়ে প্রিয় সঙ্গী ছিলেন তার হাসুপা (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা)। শৈশবে রাসেল যখনই বাবাকে কাছে পেত, সারাক্ষণ তার পাশে ঘোরাঘুরি করত। খেলার ফাঁকে ফাঁকে বাবাকে এক পলকের জন্য হলেও দেখে আসত। এরই মধ্যে জন্ম হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের। জয়কে পেয়ে তো রাসেল মহাখুশি। সে তার খেলার নতুন এক সঙ্গী পেয়েছে। সারাটা সময় জয়ের সঙ্গে মেতে থাকত রাসেল। রাসেলের মাছ ধরার খুব শখ ছিল, কিন্তু সে মাছ ধরে আবার তা পুকুরেই ছেড়ে দিত। এতেই সে মজা পেত। বঙ্গবন্ধুর বাসায় একটি পোষা কুকুর ছিল টমি নামে। ছোট্ট রাসেল টমিরও সঙ্গে খেলত। এভাবে কেটে যাচ্ছিল শেখ রাসেলের দিনগুলো।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে একদল বিপথগামী তরুণ সেনা কর্মকর্তা ট্যাংক দিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবন ঘিরে ফেলে বঙ্গবন্ধু, তার পরিবার এবং ব্যক্তিগত কর্মচারীদের সঙ্গে শেখ রাসেলকেও হত্যা করে। ছোট্ট রাসেলের দোষ কী ছিল জানেন? তার পিতা বাংলা ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। হাজার বছরের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকেই বাঙালি জাতিকে মুক্তি দিয়েছেন, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাই মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে উগ্রবাদী শক্তি। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করার জন্য নির্মমভাবে খুন করে শিশু রাসেলকেও। যুগে যুগে ষড়যন্ত্রকারী-বিশ্বাসঘাতকদের হাতে অনেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এ পৃথিবীতে। কিন্তু শিশু রাসেলকে যেভাবে পিতা-মাতা, ভাই-ভাবিদের রক্তভেজা লাশের পাশে নিয়ে পৈশাচিক উল্লাস করেছে খুনিরা, এমন নির্মম-নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড আর কোথাও ঘটেনি।