বিশ্বায়নের ফলে গত কয়েক দশক ধরে যে বৈশ্বিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিলো. যুদ্ধ এবং মানব সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে আজ তা হুমকির সম্মুখীন। এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য ঘাটতি এবং মূল্য স্ফীতি। বাংলাদেশও এ পরিস্থিতির শিকার। স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন বিপর্যয় সমাধানে ভূমিকা পালন সম্ভব।
আজ ২১ জুন ২০২৩ বিকাল ৩.০০ টায় ‘বিশ্ব বিপর্যয়ের স্থানীয় সমাধান’ স্লোগানে ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে সংস্থার কার্যালয়ে প্রদর্শনী, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্ব স্থানীয়করণ দিবস উদযাপন করা হয়।
বিশ্ব স্থানীয়করণ দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত প্রদর্শনীতে দেশীয় শাক-সবজি, ফল-মূল, বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের বীজ, ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা, দেশীয় সংস্কৃতি, হস্তশিল্প, তৈজসপত্র, ইত্যাদি উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালীকরণের অন্যতম ভিত্তি কৃষকের বাজার ব্যবস্থাপনার নমুনাও প্রদর্শনী করা হয়।
আলোচনা সভায় ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশের শাপলা খাতুনের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজ কর্মী ও প্রবর্তনার নির্বাহী ফরিদা আখতার, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, হেলথব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডার সিনিয়র উপদেষ্টা দেবরা ইফরইমসন, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ।
দেবরা ইফরইমসন বলেন, আমাদের মূল পরিচয় আমরা মানুষ, ক্রেতা নয়। বর্তমানে কর্পোরেশনগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। আমাদের ছোট ছোট যে উদ্যোক্তারা আছেন তারাই আমাদের আসল সম্পদ। বড় কর্পোরেশনগুলোকে আরো বেশি ধনী না করে আমাদের পরিবেশ, স্থানীয় মানুষ এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে বেশি প্রাধান্য দেবো। এটিই স্থানীয়করণের মূল বার্তা।
ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বিশ্বায়ন হলেও প্রযুক্তি বা জ্ঞানের বিস্তার সেভাবে ঘটেনি। বিশ্বায়নের একটি বড় প্রভাব পড়েছে জলবায়ু বিপর্যয়ের উপর। বিশ্বায়নের প্রভাবে দেশে একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়ে গেছে বহুগুণে।
হারিয়ে গেছে আমাদের বাঁশ বা পিতলের শিল্প। স্থানীয়করণকে ফিরিয়ে আনতে হলে তরুণ প্রজন্মকে সচেষ্ট হতে হবে। আমরা যারা আমাদের স্থানীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানি, আমাদের উচিত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এ বিষয়ক বার্তা পৌঁছে দেয়া।
আবু জামিল ফয়সাল বলেন, আমাদের অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের জন্য আমাদের বিশেষত অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত বিজ্ঞাপনের প্রভাবে মানুষ স্থানীয় শাক সবজি থেকে সরে এসে চিপস্, জাঙ্কফুডের উপর ঝুঁকে পড়েছে। এমনকি আমাদের হাডুডু, কানামাছি, গোল্লাছুটের মতো স্থানীয় খেলাগুলোও হারিয়ে গেছে। বর্তমানে শারীরিক কার্যক্রমের কোন সুযোগই শিশুদের নেই। আজকের উদ্যোগের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন উপকরণ, খেলাধূলা, সংস্কৃতি, স্থানীয় শাক-সবজির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রয়াস নেয়া হয়েছে। স্থানীয় যে সংস্কৃতি আমাদের ছিলো তা ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে আমাদের সত্যিকারের উন্নয়ন হওয়া সম্ভব।
ফরিদা আখতার বলেন, অন্যান্য দেশ থেকে খাদ্য আমদানী করার জন্য ষোল বিলিয়ন টন কার্বন নিঃসরণ হয়, যা আমাদের জলবায়ু বিপর্যয় তরান্বিত করে। খাদ্য ব্যবস্থাপনাকে স্থানীয়করণ করা হলে এ সমস্যা অনেকাংশেই সমাধান করা সম্ভব। বিশ্বের অনেক দেশে বর্তমানে কৃষকের বাজার অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও এ ধারণাটি প্রচলিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা খাদ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে পারবো।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের পরিকল্পনার কারণেই আমাদের স্থানীয় অনেক কিছু হারিয়ে গেছে। আমাদের সকল পরিকল্পনাই ঢাকাকেন্দ্রিক। যার ফলে অন্যান্য শহরগুলোর কোন উন্নয়ন হয়নি। সমভাবে উন্নয়ন হলে এবং আমাদের নিজেদের পণ্য নিজেরা উৎপাদন করে স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দুর্যোগের সময়ে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে পারি।
আয়োজনে আরো বক্তব্য রাখেন শাহীদ আলম চৌধুরী, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর, গ্রামীণ ইউগ্লেনা কর্পোরেশন, এম এ মান্নান মনির, প্রতিষ্ঠাতা, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, এইচ এম নুরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষক, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুল, খালিদ হোসেন, ফাউন্ডার, কাউন্সিল অব মাইনরিটি, রাদরিক হাসান, বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্ট সোসাইটি, জান্নাতুল ফেরদৌস, নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, মাসুমা খাতুন সাথী, সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা, আপনঘর ফাউন্ডেশন, ইভান আহমেদ কথা, প্রতিষ্ঠাতা, কথা কলা কেন্দ্র।
একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আয়োজনের পরিসমাপ্তি ঘটে।