বর্তমানে গণপরিসরগুলোতে বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি দিন দিন বেড়ে চলেছে। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে উন্মুক্ত স্থানগুলোতে সকলের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি দেশের সকল উন্মুক্ত স্থানসমূহ চিহ্নিত করে সেগুলোর তালিকা প্রকাশ করা প্রয়োজন।
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, সকাল ১১.০০ টায় শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এমতাবস্থায় পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল লয়ার্স এসোসিয়েশন (বেলা), নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, বি-স্ক্যান ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টসহ মোট ২৬ টি সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে “পার্ক ও খেলার মাঠ থেকে সকল নির্মিত ও নির্মাণাধীন বাণিজ্যিক স্থাপনার অপসারণ চাই” শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
কর্মসূচিতে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, মাঠ-পার্ক গুলোতে সকল শ্রেণীর মানুষের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণে আইনের সঠিক প্রয়োগ প্রয়োজন। গণপরিসরগুলোতে বাণিজ্যিক স্থাপনা বৃদ্ধি পেতে থাকলে জনগণের বিশেষত, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখিন হবে। বিদ্যমান মাঠ-পার্কগুলোর অবকাঠামোগত অবক্ষয় প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে আমাদেরকে এখনই সচেতন হতে হবে। ঘনবসতি এবং উন্মুক্ত স্থানের অপর্যাপ্ততার কারণে ভূমিকম্প হলে আমরা ভয়াবহ দুর্যোগের শিকার হবো। সুতরাং উন্মুক্ত স্থান তৈরি ও সংরক্ষণে আমাদের আরও সচেষ্ট হতে হবে।
প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন এর সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ বলেন, প্রতিনিয়তই আমরা বায়ু ও শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছি, যা আমাদের ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ। একই সাথে খোলা স্থান এর ঘাটতির জন্য আমাদের শিশুরা তাদের প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ হারাচ্ছে। পর্যাপ্ত মাঠ-পার্ক নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দূষণরোধ এবং শারীরিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখা সম্ভব।
বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল লয়ার্স এসোসিয়েশন (বেলা)-এর রাইসুল হাসান বলেন, পার্ক ও মাঠের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণ ও বাণিজ্যিকীকরণ মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ এর স্পষ্ট লংঘন। মাঠ-পার্ক রক্ষায় সরকারকে আরো সচেষ্ট হতে হবে।
ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এমএ মান্নান মনির বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়গুলোতে মাঠ না থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধূলার সুযোগ পায় না। এলাকার যে বিদ্যালয়গুলোতে মাঠ রয়েছে, তা বিদ্যালয় সময়ের বাইরে এলাকাবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার মাধ্যমে এলাকাবাসীর খেলাধূলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ তৈরি সম্ভব।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, ঢাকা শহর বসবাসযোগ্যতার দিক থেকে প্রায় তলানিতে। মাঠ-পার্ক-উন্মুক্ত স্থান একটি শহরের বাসযোগ্যতার অন্যতম সূচক। সম্প্রতি অনুমোদিত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় শহরের বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর এলাকায় ৫টি বৃহৎ আঞ্চলিক পার্ক, ৫৫টি জলকেন্দ্রিক পার্ক, ১৪ টি বৃহৎ ইকোপার্ক, এবং ১৪ টি অন্যান্য পার্ক ও খেলার মাঠের বাস্তবায়নের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ) এর সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাজধানীর ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই। শিশুদের বিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত খেলাধূলার সুযোগ না থাকায় শিশুদের মধ্যে কম্পিউটার-মোবাইলসহ বিভিন্ন ডিভাইসের প্রতি আসক্তি বেড়ে গেছে। করোনাকালীন অনলাইনে ক্লাস করার কারণে এ সমস্যা আরো ভয়াবহতা ধারণ করেছে। শহরে নতুন নতুন মাঠ-পার্ক-গণপরিসর সৃষ্টির পাশাপাশি বিদ্যমান মাঠ-পার্কের যথাযথ সংস্কার ও সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হলে এ সমস্যা অনেকটাই সমাধান করা যাবে।
এছাড়াও কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন ছায়াতল বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী মোঃ ইমন, ডিজ্যাবিলিটি ডিফারেন্ট প্রোগ্রাম (ডিডিপি)-এর সভাপতি জাকির হোসেন, গ্রীন ভয়েজ-এর সমন্বয়ক আলমগীর কবির, সাইকেলার্স অব বাংলাদেশ-এর প্রেসিডেন্ট সিফাত হারুন, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের জাতীয় কমিটির সভাপতি নাজিমউদ্দিন, টিসিআরসি-এর প্রজেক্ট অফিসার বিভূতিভূষণ মাহাতো, আলোর দিশারীর সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল খালেক, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক বরনী ডালবত।
আয়োজনে আরো উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (পবা), পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ডিজ্যাবেল ওয়েলফেয়ার সোস্যাইটি, অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, ডাব্লিউডিডিএফ, বি-স্ক্যান, এসডিএসএল, টিম ইনক্লুশন বাংলাদেশ, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ, লিও ক্লাব অফ ঢাকা ওয়েসিস, সূর্য শিশির রানার্স কমিউনিটি এর প্রতিনিধিবৃন্দ।