বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাতিল, চাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানো, স্বল্প আয়ের মানুষকে রেশন দেয়ার দাবিতে ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার বিকাল ৪ টায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার আহবায়ক নিখিল দাসের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব আবুু নাঈম খান বিপ্লব, বাসদ সোনারগাঁ উপজেলার সমন্বয়ক বেলায়েত হোসেন, ফতুল্লা থানার সদস্যসচিব এস এম কাদির, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের জেলার সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আক্তার।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার তার শাসনামলের ১৪ বছরে ১০ বার মূল্য বৃদ্ধি করে বিদ্যুতের দাম দ্বিগুন করেছে। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে যখন জনজীবন বিপর্যস্ত সরকার তখন আবারও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বিইআরসি গণশুনানি করেছে। কোম্পানিগুলো বিদ্যুতের দাম ২০ থেকে ২৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের গড় দাম ৭.১৩ টাকা। বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ১৫.৪৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। গণশুনানিতে কোম্পানিগুলো বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। ভোক্তাদের পক্ষ থেকে যে প্রশ্ন রাখা হয়েছে তার জবাব দিতে পারেনি।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়লে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে।
এসময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়লে নিত্যপণ্যের দাম আরেকদফা বাড়বে। জিনিসপত্রের দাম বহু আগেই সাধারণ মানুষের ক্রয় সীমার বাইরে চলে গেছে। আবার বৃদ্ধি মানুষের জীবনকে পর্যুদস্ত করে দিবে। বাস্তবে বিদ্যুৎখাতে চুরি, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, অপচয় বন্ধ করা গেলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই। এগুলো বন্ধে সরকারের কোন উদ্যোগ নেই। অথচ এর দায় দাম বৃদ্ধি কওে জনগণের উপর চাপানো হচ্ছে। যেখানে বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে সরকারের উচিত দাম কমানোর ব্যবস্থা করা। সেখানে এসময়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিকে আরও উসকে দিবে। এক্ষেত্রে সরকার জনসাধারণের সংকটের কথা বিবেচনায় না নিয়ে দুর্নীতিবাজ, মুনাফাখোর, লুটপাটকারীদের স্বার্থ রক্ষা করছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার বিভিন্ন বাহিনীকে রেশন দেয়। অথচ যারা দেশের উৎপাদনের চাকাকে চালু রাখছে। যাদের উৎপাদনে বৈদেশিক মূদ্রা দেশে আসছে সেই শ্রমজীবী মানুষকে রেশন দিচ্ছে না। টিসিবির মাধ্যমে এবং পারিবারিক কার্ডে যে কয়েকটি খাদ্যপণ্য দিচ্ছে তা খুবই অপ্রতুল। ভোর থেকে লাইনে দাঁড়ালেও অনেকে পাচ্ছে না। এখানে দাম সাশ্রয়ও সামান্য। এ অবস্থায় শ্রমজীবী স্বল্প আয়ের মানুষকে বাঁচাতে ও উৎপাদন অব্যাহত রাখতে আর্মি রেটে রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন. বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ভোটারবিহীন ও রাতের অন্ধকারের ভোটে বিগত দুটি নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছে। যেহেতু জনগণের রায়ে ক্ষমতায় আসেনি, ফলে জনগণের উপর ফ্যাসিবাদী শাসন চাপিয়ে দেশ পরিচালনা করছে। বিরোধী মতকে দমন করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কালো আইন জারি করেছে। আন্দোলনে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করছে। বিরোধী নেতা কর্মীদের গ্রেফতার নির্যাতন চালাচ্ছে। গুম, খুন, হত্যা, দমন-পীড়নের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে। আমাদের দেশের ৫০ বছরের ইতিহাস থেকে আমরা জানি দলীয় সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। সরকার কারচুপির মাধ্যমে আরেকবার ক্ষমতায় আসার জন্য নীলনকশা তৈরি করছে। জনগণের কোন আস্থা এ সরকারের উপর নেই।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাতিল, নিত্যপণ্যের দাম কমানো এবং নিম্ন আয়ের মানুষকে রেশন প্রদান এবং সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করেন। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাতিলের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট নারায়ণগঞ্জ জেলার পক্ষ থেকে ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ বিকাল ৪ টায় শহিদ মিনারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।