নারায়নগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকায় অনুমোদন ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে সুতা রঙ করার ‘ডাইং মিল’। অধিকাংশ এ সব ডাইংয়ের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। এ কারণে মিলের রঙ ও বিভিন্ন ক্ষতিকর কেমিক্যালের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে আশপাশের খাল, বিল, পুকুর ও নদীর শাখাসহ আবাদি জমিতে। ফলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ব্যাপক হুমকিতে পড়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাজীগঞ্জ এলাকার এক ব্যক্তি বলেন,নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকটি ডাইং মিল কোন প্রকার কাগজপত্র ছাড়াই চলছে। মিলের ক্ষতিকর বর্জ্য খালের পানিতে মিশে যাচ্ছে। বর্জ্যের দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষিত হয়ে আশপাশের মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ডাইংয়ের মালিকদের রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে, তাই কেউ এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।
প্রশাসন ও নেতা ম্যানেজ করেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে নারায়ণগঞ্জের যত্রতত্র গড়ে উঠা ছোটবড় প্রায় শতাধিক ডাইং কারখানা। এরা কোন ধরনের নিয়মনীতি না মেনে কারখানাগুলোর বর্জ্যের পানি এলাকার পরিবেশ দূষন করে যাচ্ছে। এতে করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার বসবাসরত মানুষ। প্রশাসনও রয়েছে নিরব ভূমিকায়। প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষের কোন তৎপরতা না থাকায় এলাকাবাসী ফুঁসে উঠছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলে কারখানাগুলো সরকারের কোন প্রকার অনুমোদন বা লাইসেন্স না থাকায় কারখানাগুলো থেকে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। প্রশাসন ও স্থানীয় নেতা ম্যানেজ করে নারায়ণগঞ্জে এ রকম কয়েক শত ডাইং কারখানায় অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে।
এসব ডাইং কারখানা পরিবেশ দূষনের জন্য যেমন দায়ী তেমনি ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি করছে। এদের দূষিত পানি ফসলী জমিতে সরাসরি গিয়ে পড়ছে। এতে করে প্রায় সব এলাকার বেশিরভাগ জমির ফসল বিনষ্ট হচ্ছে। এসব জমিতে সারা বছর কালো পানি জমে থাকার কারনে কোন প্রকার ফসল ফলাতে পারছেনা কৃষকরা। এতে করে কম মূল্যে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে তারা।
হাসান ডাইং কারখানার আশ পাশে প্রায় ৪ হাজার পরিবার স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে। কারখানাটি গত ২ বছর যাবত চালু রয়েছে। গ্যাস সংযোগ না পেয়ে কয়লা কাঠ দিয়ে কারখানাটি চালিয়ে আসছে। ফলে কারখানার কালো ধুয়া ও কেমিক্যাল মিশ্রিত পানিতে এলাকাবাসীর শরীরে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। ম্যালেরিয়া, শ্বাসকষ্ট, এজমাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছে লোকজন। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশী। এলাকার বেশীরভাগ মানুষ গরীব বলে অনেকেই চিকিৎসার টাকা জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে। এ সুযোগে কাখানার মালিক এলাকার অনেক অসহায় গরীব শিশুদের দিয়ে কম বেতনে কারখানার কাজে নিচ্ছে। এতে করে শিশুরা লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অমান্য করা হচ্ছে শিশুশ্রম আইন।