নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে জমে উঠেছে বড় শাহজাহানের ভাসমান জমজমাট জুয়ার আসর। এদের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হবে যেন, একেকটি মিনি ক্যাসিনো। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে এই জুয়ার আড্ডা।
বিভিন্ন স্থান থেকে আসা উঠতি বয়সী যুবক থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যোগ দেন জুয়ার আড্ডায়। ভয়ঙ্কর বিষয় হলো জুয়ায় আড্ডায় স্কুল পড়ুয়া কিশোররাও আসে। আবার জুয়া খেলার পাশাপাশি চলে রাতভর মাদকসেবন। জুয়াড়িদের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে এলাকাবাসীদের। প্রতিবাদ করেও মিলছে না কোনো প্রতিকার।
কেউ ফিরে নি:ম্ব হয়ে আবার কেউ ফেরে টাকার বস্তা নিয়ে। এমনি করেই বছরের পর বছর জুয়া খেলায় হারিয়ে যাচ্ছে অনেক পরিবার। তারপর ও থেমে নেই শাহজাহানের জুয়ার আসর। একের পর এক অভিযান চালালেও থামছে না এ খেলা। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠা শতাধিক ক্লাবগুলোতে সন্ধ্যা নামতেই বসে শাহজাহানের ভাসমান জুয়ার আসর।
আসরগুলোতে ওয়ান-টেন, ওয়ান-এইট, তিন তাস, নয় তাস, কাটাকাটি, আরো নানা নামের জুয়া চলে। লোভ সামলাতে না পেরে অনেকেই পথে বসছেন। এতে পারিবারিক অশান্তিসহ সামাজিক নানা অসংগতি বাড়ছে। ভুক্তভোগীরা সর্বস্বান্ত হলেও জুয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আয়োজক চক্র। আর এ কাজে সহায়তা দিচ্ছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী।
সূত্র মতে জানা যায় বিভিন্ন এলাকার জুয়ারিদের কাছে শাহজাহান ভ্রাম্যমান জুয়ার সম্রাট হিসেবে পরিচিত।আর তার এই জুয়ার আসরের ক্যাশিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মাসুম নামের এক নামধারী বিএনপি নেতা।সে শহরের কালীরবাজার, টানবাজারের ইয়ার্ণ মার্চেন্ট অফিস, বাসষ্ট্যান্ড,হাজীগঞ্জ,সাইনবোর্ড,ভূইঘর, জালকুঁড়ি ও নতুন জিমখানা,লঞ্চ টার্মিনালের জুয়ার আসরের মূল হোতা।
আরো জানা যায়,নারায়ণগঞ্জের ৫ নং মাছ ঘাট এলাকায় সরকারি জমির উপরে শাহজাহানের জুয়ার আসর বর্তমানে বন্ধ থাকলেও কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং কথিত সাংবাদিকদের সাথে সমঝোতা করে আবার বড় ধরনের আসর বসানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জেলার প্রতিটি জুয়ার আসরেই বিভিন্ন স্থান থেকে যুবক থেকে শুরু করে মধ্য বয়সীরা পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেন। প্রশাসন ট্যাকেল দেওয়ার নামে প্রতিটি জুয়ার আসর থেকে মাসোয়ারা নিচ্ছেন সুশীল সমাজের পরিচয়ধারী এক শ্রেণির অসাধু গোষ্ঠী। যাদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, সমাজসেবক, নামধারী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যরাও জুয়াড়িদের কাছ থেকে মাসোয়ার নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ সমস্ত অনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে অনাগত ভবিষ্যৎ। বিভিন্ন স্থানে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও জড়িয়ে পড়ছেন জুয়া ও মাদকের দুনিয়ায়। জুয়া ও মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে মা-বাবাকে নির্যাতন, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই পর্যন্ত করছে এসব শিক্ষার্থীরা। তাদের উৎপাতে বাড়ির আঙ্গিনায় ফলানো শাক-সবজি ও মাছ পর্যন্ত রাখতে পারছেন না অনেকে।
ভুক্তভোগী পরিবারদের দাবী র্যাব,গোয়েন্দা,পুলিশ প্রশাসন যাতে অতিশীঘ্রই এইসকল জুয়ারীদের উপর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকেন।