নাসিম ওসমানের জন্ম নারায়ণগঞ্জ জেলায়। ১৯৫৩ সালের ৩১ জুলাই তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
নাসিম ওসমান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। নাসিম ওসমান প্রথমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তার বাবা এ কে এম শামসুজ্জোহা ছিলেন প্রখ্যাত আওয়ামী লীগ নেতা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম সহচর। পরবর্তীতে নাসিম ওসমান বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে পড়েন। তিনি ৪ বার বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির হয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, যথাক্রমে ১৯৮৬, ১৯৮৮, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নাসিম ওসমান ভারতে চলে যান। সেখানে তিনি গেরিলা যুদ্ধ প্রশিক্ষণ শেষ করে দেশে ফিরে এসে যুদ্ধ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের সকলের সাথে হত্যা করা হয়। তার আগের দিন ১৪ আগস্ট তিনি পারভীন ওসমানকে বিয়ে করেন। বিয়েতে শেখ মুজিবুর রহমানের পুত্র শেখ কামাল উপস্থিত ছিলেন। ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলে নাসিম ওসমান নবপত্নীকে ফেলে হত্যার প্রতিশোধ নিতে চলে যান। তিনি ঢাকায় প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর তিনি আবার ভারতে চলে যান এবং সেখানে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন। তৎকালীন কাদের বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
নাসিম ওসমানের বাবা এ কে এম শামসুজ্জোহা ছিলেন প্রখ্যাত আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য।[৫] তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর আবার ১৯৭৩ সালে তিনি একই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। নাসিম ওসমানের ছোট ভাই শামীম ওসমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য। তার মেঝো ভাই সেলিম ওসমান তার মৃত্যুর পর সাংসদ নির্বাচিত হন।[৬] নাসিম ওসমানের স্ত্রীর নাম পারভিন ওসমান। এই দম্পতির এক ছেলে ও দুই কন্যা আছে।
তার সম্মানে শীতলক্ষ্যা নদীতে নির্মিত তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর নামকরণ করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু।
২০১৪ সালের ১৮ এপ্রিল চিকিৎসার জন্য নাসিম ওসমানকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। দিল্লিতে চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি দেরাদুন যান। সেখানে একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থানকালে আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি ৩০ এপ্রিল, ২০১৪ সালে মারা যান।
প্রয়াত আলহাজ্ব নাসিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে ১৯৮৪, ১৯৮৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দরসহ নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন করে নারায়নগঞ্জকে একটি মডেল শহর হিসেবে রুপান্তর করেছেন। নারায়ণগঞ্জ শহর জুড়ে সর্বপ্রথম সোডিয়াম বাতির আলো তার সময় কালেই জ্বলে উঠে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংরোড,খানপুর ৩০০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জ পৌরসভাকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা এ সকল উন্নয়নের চিহ্ন প্রবাহমান।বন্দরবাসীর কাছে এখনো স্মরণীয় বন্দরের কিছু অংশ সোনারগাঁও থানা এরিয়া নিতে চাইলেও তা নিতে না দিয়ে বন্দর থানা এলাকাতেই রাখা তার বিশেষ অবদান । তিনি ছিলেন বন্দর ও নারায়ণগঞ্জের মাটি ও গন মানুষের নেতা।
প্রয়াত নাসিম ওসমান নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের প্রয়াত ভাষা সৈনিক ও স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠন, সাবেক এম এল এ, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহোচর ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠার অন্যতম ব্যক্তিত্ব মরহুম একেএম শামসুজ্জোহা ও প্রয়াত ভাষা সৈনিক নাগিনা জোহার বড় ছেলে এবং বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-৫ ও ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান ও একেএম শামীম ওসমানের বড় ভাই। আমাদের সকলের প্রিয় এ নেতা জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে সব থেকে বেশি মেয়াদে নির্বাচিত সংসদ সদস্য।
নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর স্মৃতিচারণ করে সংসদে বক্তব্য দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী নাসিম ওসমানের শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনার সময় বলেছিলেন , ”ওসমান পরিবারের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর একটা নিবিড় সম্পর্ক ছিল। ওই পরিবারে বসেই জন্ম হয়েছিল নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের।নাসিম ওসমানের দাদা খান সাহেব ওসমান আলী এবং বাবা সামছুজ্জোহা খান ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত কাছের মানুষ। নাসিম ওসমান বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে একটি যুব ব্রিগেড গড়ে তুলেছিলেন। জাতীয় পার্টি করলেও তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের।