সকাল নারায়ণগঞ্জ অনলাইন ডেস্কঃ ইবনে তাইমিয়া (রহ.), একজন সালাফি ইসলামি পন্ডিত, দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক ও যুক্তিবিদ। হিজরী সপ্তম শতাব্দীর একজন সংস্কারক। ইসলাম ধর্মীয় পণ্ডিতদের মাঝে একজন উজ্জল নক্ষত্র।
আজ তার জন্মদিন। ১২৬৩ সালের ২২ জানুয়ারি (৬৬১ হিজরি) সিরিয়ার হাররান (বর্তমানে তুরস্কের অর্ন্তগত) প্রদেশে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
ইবনে তাইমিয়ার পূর্ণ নাম তাকিউদ্দিন আবুল আব্বাস ইবনে আবদুল হালিম ইবনে আবদুস সালাম ইবনে তাইমিয়া আল হারানি। তবে তিনি ‘ইবনে তাইমিয়া’ নামে বেশি পরিচিত। মূলত: এটা তার দাদীর নাম। তার দাদী ছিলেন একজন আলিমাহ। ইবনে তাইমিয়ার গুরুদের মাঝে তার দাদীমা অন্যতম।
বাল্যকাল হতেই ইবনে তাইমিয়ার অসাধারণ মেধা ও আশ্চর্য স্মৃতিশক্তির ক্ষমতা পরিলক্ষিত হয়েছিল। তার দাদী বুঝতে পেরেছিলেন যে তার নাতিন একদিন ইসলাম ধর্মের একজন বিখ্যাত ব্যাক্তিত্বে পরিণত হবেন।
ইবনে তাইমিয়া তার সূক্ষ্ম বিচারশক্তি ও সুদক্ষ তাকির্কতার পারদর্শীতার কারণে আলেম সমাজে অবিস্মরণীয়। তিনি ছিলেন অসাধারণ পান্ডিত্যের অধিকারী একজন ফকীহ।
তিনি ছিলেন একজন হাফেজ। আল-কোরআন ও হাদীসের ব্যখ্যা প্রদানে সে সময় তার সমকক্ষ তেমন কেউ ছিলনা বললেই চলে। ইবনে তাইমিয়া ইসলামি আইনের ক্ষেত্রে হাম্বলি মাজহাবের অনুসারী ছিলেন। ইবনে কুদামার পাশাপাশি তার অনুসারীরা ইবনে তাইমিয়াকে হাম্বলি মাজহাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রবক্তা হিসেবে গণ্য করেন।
তাই ইবনে তাইমিয়াকে ‘শাইখুল ইসলাম’ বলে সম্বোধন করা হয়।
বনে তাইমিয়া কুরআন ও সুন্নাহর প্রাথমিক যুগের ব্যাখ্যাকে গ্রহণ করার পক্ষাপাতি ছিলেন। ওয়াহাবিবাদ, সালাফিবাদ ও জিহাদপন্থার উপর তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
ইসলামী ইতিহাসের অনন্য প্রতিভার অধিকারী এই আলেমের জীবনী অত্যন্ত ঘটনা বহুল এবং সংগ্রাম মুখর ছিল। মঙ্গোল আক্রমণের সময় তিনি জীবিত ছিলেন। মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে জিহাদের ফতোয়ার কারণে তিনি বেশি আলোচিত হয়েছিলেন।
তার সময়ে মোঙ্গলরা ইসলাম গ্রহণ করলেও শরিয়ার অনুসরণ না করায় তিনি তাদের অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
মুসলমানদের মধ্য থেকে শিরক, বিদাত দূর করার জন্যে ইবনে তাইমিয়া লিখনী ও বক্তৃতার মাধ্যমে সার জীবন কাজ করে গেছেন। তার লেখনীতে সে সময় সামাজিক কুসংস্কার গুলো অনেকাংশে দূরীভূত হয়।
ইবনে তাইমিয়া প্রসংগে যুগেযুগে বহু আলেম তার গুণকীর্তন করেছেন। ভারতের সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব আল্লামাহ শিবলী নুমান রহ: তার সম্পর্কে বলেন, ‘ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মাঝে মুজাদ্দিদ হওয়ার যে বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়েছিলো, তা চার ইমাম (ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী এবং ইমাম আহমাদ) এর মাঝেও ছিলোনা।’
ইমাম ইবনে তাইমিয়া ৫০০ এর অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তবে ড: সিরাজুল হক তার ২৫৬টি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করেছেন। ‘আল-জাওয়াবুস সহীহ লিমান বাদালা দ্বীনিল মাসিহ’ ধর্ম তত্ত্বের উপর তার লিখিত বিখ্যাত গ্রন্থ।
বিরোধীদের চক্রান্তে ইবনে তাইমিয়াকে জীবনের অনেকটা সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছিলো। এমনকি ইমাম আবু হানীফার মতো তার মৃত্যুও কারাগারের ভেতরেই হয়েছিলো। মৃত্যুর এর বছর পূর্ব থেকে ইবনে তাইমিয়াকে কলম, কালি, কাগজ সরবরাহ করা হয়নি, যাতে তিনি তার জ্ঞান না লিপিবদ্ধ করতে পারেন।
বিশ্ববিখ্যাত এ ইমাম ১৩২৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর (২২ যুলক্কাদা ৭২৮ হিজরীতে) সিরিয়ার দামেস্কের কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন।
ঐতিহাসিকগণদের মতে, তার মৃত্যুর পর প্রায় দুই লক্ষ মুসলমান তার জানাজা পড়ার জন্যে সমবেত হয়েছিলো। ইবনে তাইমিয়ার কিছু উক্তি:
‘আবু বকর (রা:) এর মত কেউ কোনদিন রাসূলুল্লাহ (সা:) কে ভালোবাসেনি। সুতরাং যারা আবু বকরকে ঘৃণা করে তারা শ্রেষ্ঠ মুনাফিকদের দলভুক্ত।’ সূত্র: আল-মিনহাজ, ৪/৩০০ পৃষ্ঠা।
‘পৃথিবীর মানুষের যত পথভ্রষ্টতা তার মূল নিহিত এই দুইটি জিনিসে: হয় আল্লাহ অনুমোদন দেননি এমন কিছুকে ধর্ম হিসেবে নেয়া, অথবা আল্লাহ নিষেধ করেননি এমন কিছুকে নিষিদ্ধ করা।’ সূত্র: মাজমূ’উল-ফাতাওয়া, ৪/১৯৬ পৃষ্ঠা।
‘আল্লাহ ভালোবাসা পেতে ভালোবাসেন।’ সুত্র: মাজমু আল ফাতাওয়া, ১/৫৪ পৃষ্ঠা।
সে হিসেবেই হালিমাতুস সাদিয়া (রা.) তায়েফ থেকে এসে রাসূল (সা.)কে গ্রহণ করেন এবং তাঁর দুধমাতা হওয়ার সম্মান লাভ করেন। এ দুধমাতার সম্পর্ককে ইসলাম এতটাই সম্মান দিয়েছে যে, পর্দা ও বিবাহের বিধানের ক্ষেত্রে দুধমাতাকে মায়ের আসনে রেখে দুধমায়ের স্বামী, সন্তান, নাতি-নাতনিকে আপন পরিবারের মর্যাদা দিয়েছে এবং তাদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম করেছে।
আজকের হিউম্যান মিল্কব্যাংকের মাধ্যমে ইসলামের এ পবিত্র সম্পর্ককে ভেঙে ফেলা প্রক্রিয়া কিনা ভাবতে হবে। প্রচলিত মিল্কব্যাংক যা করছে তাহল, বিভিন্ন মায়ের দুধকে একসঙ্গে করে নানা প্রসেস করে সংরক্ষণ করছে যেন যাদের প্রয়োজন, তারা সহজেই তাদের শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় দুধ পেয়ে যান। পুরো ব্যাপারটাই ডোনেশন বা অনুদান।
শরিয়তের দৃষ্টিতে দুধমাতা নির্ধারিত না হওয়ায় একজন শিশুর সঙ্গে অনেক মায়ের পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপিত হতে পারে এবং ভবিষ্যতে ওই মায়েদের সন্তানাদি, ভাইবোন শিশুর জন্য বিবাহ নিষেধ হয়ে যাবে।
আন্তর্জাতিক ইসলামিক ফিকহ একাডেমি এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, মিল্কব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা এবং এর থেকে শিশুর জন্য দুধ নেয়া জায়েজ নেই। তবে একই বিষয়ে ড. ইউসুফ কারযাভীসহ কিছু স্কলার এটাকে শর্তসাপেক্ষে জায়েজ বলেছেন।
মা-শিশুর এ দুধের সম্পর্কের সবচেয়ে জরুরি দিক হল উষ্ণতা। হিউম্যান মিল্কব্যাংক যা দিতে পারবে না। কারণ এটা সম্ভব নয়। চেষ্টা করা দরকার, কীভাবে শিশুদের জন্য পার্টটাইম দুগ্ধদাত্রী মা এবং সেই সব মাকে পার্টটাইম নবজাতক এনে দেয়া যায়। এ দু’পক্ষের যোগাযোগের মাধ্যমে একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করাটাই অসাধারণ কাজ হতে পারে।
লেখক : প্রাবন্ধিক বিভাগীয় প্রধান (হাদিস), আল ফাতাহ পাবলিকেশন্স