সিদ্ধিরগঞ্জে সন্ত্রাস ইভটিজিং, কিশোরগ্যাং ও মাদকমুক্ত সমাজের দাবিতে মানববন্ধন করেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১নং ওয়ার্ডবাসী। শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মিজমিজি টেরা মার্কেট এলাকায় ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের সমানে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এসময় ওই ওয়ার্ডের শত শত মানুষ “টাইগার ফারুক গং অবৈধ অস্ত্রধারী সিন্ডিকেট থেকে সিদ্ধিরগঞ্জবাসী মুক্তি চায়, ভুমিদস্যু ও কিশোর গ্যাং গডফাদার সজুর হাত থেকে সাধারণ মানুষ মুক্তি চায়, চিহ্নিত মাদক সরবারহকারী ফরহাদ, শরীফ, মেহেদী, সোহেল এর কাছ থেকে যুব সমাজ মুক্তি চায়, মাদক সম্রাট জসিমের কাছ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের যুব সমাজ মুক্তি চায়” লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে অংশগ্রহণ করে।
মানববন্দনে টাইগার গ্যাং নিপাত যাক, সিদ্ধিরগঞ্জ বাসী মুক্তি পাক, টাইগার গ্যাংয়ের মাদক সিন্ডিকেট থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ বাসী মুক্তি চায়সহ সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা।
এতে সভাপতিত্ব করেন ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম। এসময় এলাকাবাসীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে যোগদেন নাসি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আমিনুল হক রাজুসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ১ নং ওয়ার্ডে কিশোরগ্যাং ও মাদকের ভয়াবহতা চরম আকার ধারণ করেছে। এসব কিশোরগ্যাং চক্র ও মাদক ব্যবসায়ীরা বীরদর্পে অন্যায় অপকর্ম করছে। তাদের হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে সাধারণ নিরীহ মানুষ।
তাদের তৎপরতা এতই বেড়েছে যে কয়েকদিন আগে কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের বাড়ীতেও হামলা চালিয়েছে। এঘটনায় মামলাও হয়েছে। কিন্তু পুলিশ আসামি ধরতে তৎপর হয়নি। আসামিরা উচ্চ আদলত থেকে জামিনে এসে এলাকায় ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
এ সময় টাইগার ফারুক ও তার বাহিনীর প্রতি হুশিয়ারি দিয়ে বক্তারা আরো বলেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা ব্যবস্থা না নিলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সামজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
আওয়ামী লীগ নেতা হাজী ইয়াছিন মিয়া বলেন, সন্ত্রাসী মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী সোচ্চার হলে কিছুতেই তারা পার পাবেনা। সন্ত্রাস মাদক নির্মূলে প্রশাসনকে সবধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছি। মাদকের বিরুদ্ধে ১ নং ওয়ার্ডবাসীর প্রতিবাদী হয়ে উঠা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
আগামী তিন দিনের মধ্যে এসব অপরাধী ও সমস্যার সমাধানে সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সভাপতির বক্তব্যে কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম বলেন, ১ নং ওয়ার্ডবাসী যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে যে লক্ষে সন্ত্রাস ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান সবসময় কঠোর থাকবে।
১ নং ওয়ার্ডে কাউকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও মাদক ব্যবসা করতে দেওয়া হবেনা। সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে মাদকের বিকরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগষ্ট বুধবার সন্ধ্যায় নাসিক ১নং ওয়ার্ডের মিজমিজি টিসি রোড এলাকাস্থ কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের নিজ বাড়িতে অবস্থিত কার্যালয়ে মাদক সিন্ডিকেটর অন্যতম হোতা টাইগার ফারুকের নেতৃত্বে দেড় থেকে দুইশত সন্ত্রাসী বাহিনী দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এসময় এ সন্ত্রাসী বাহিনী কাউন্সিলরের বাড়িতে তান্ডব চালায় এবং কাউন্সিলরের লোকজনকে মারধর করে।
এই ঘটনায় গত ২৫ আগষ্ট বৃহস্পতিবার সকালে নাসিক ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের অফিস সহকারী আবিদ হাসান রাকিব বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা (যার নং-৪৫) দায়ের করেন।
মামলার প্রেক্ষিতে মোঃ স্বপন ওরফে কসাই স্বপন সহ দুই জনকে ওই দিন রাতেই গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামসহ ৫ জন আহত হন।
মামলার অভিযুক্তরা হলেন, টাইগার ফারুক (৪২), তানজিম কবির সজু (৩৮), মোঃ আরাফাত রহমান বাবু (২৯), মিলন হোসেন (৩০), মোঃ সোহেল (৩২), মোঃ শরীফ (২৯), মোঃ স্বপন ওরফে কসাই স্বপন (৩২), মোঃ সিফাত হোসেন (২৪), মোঃ জসিম হোসেন (৩৮)।
১নং ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন থেকে টাইগার ফারুক মাদক, সন্ত্রাস, কিশোরগ্যাং সহ বিভিন্ন সিন্ডিকেট গড়ে তুলে অপরাধ কর্মকান্ড করে আসছে। একাধিকবার বিপুল পরিমান মাদকসহ তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা
আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়ে। এছাড়াও এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করায় টাইগার ফারুকসহ তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, টাইগার ফারুক স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ছত্রছায়ায় থেকে এসব অপরাধ নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে।