সকাল নারায়ণগঞ্জ:
স্টাফ রিপোর্টার (আশিক)
ঢাকা জেলার আশুলিয়ার নরসিংপুর এলাকায় চাঞ্চল্যকর বাস চাপায় গার্মেন্টস কর্মকর্তা নির্মমভাবে হতাহতের ঘটনায় পলাতক ২ আসামীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪।
এলিট ফোর্স হিসেবে র্যাব আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের নৃশংস ও ঘৃণ্যতম অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ছিনতাই, খুন-গুমসহ নৃশংসতম অপরাধসমূহ নিয়ে এলিট ফোর্স র্যাব বরাবরের মতই সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে কাজ করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধের মূল রহস্য উদঘাটন এবং অপরাধীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যায় যে, গত শুক্রবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টা ১২ মিনিটের সময় শারমিন গার্মেন্টস এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোটরসাইকেল আরোহী জনাব শামছুল আলম (৪৫)’কে “আশুলিয়া ক্লাসিক পরিবহণ” রং সাইডে গিয়ে বাস চাপা দেয় যার ফলে ঘটনাস্থলে উক্ত ভিকটিম মর্মান্তিকভাবে নিহত হন।
প্রায় ১ কিঃ মিঃ গাড়ী চালানোর পর উক্ত পরিবহনের ড্রাইভার ও হেলপার গাড়ী রেখে পালিয়ে যায়। এতে বিক্ষুব্ধ জনতা ঢাকা বাইপাইল সড়ক অবরোধ করে আনুমানিক ২০-২৫ টি বাস ভাংচুরসহ প্রায় ০৫ টি বাসে অগ্নিসংযোগ ঘটায়। উত্তেজিত জনতা উক্ত বাসের ড্রাইভার ও হেলপারকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য ঢাকা বাইপাইল সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে।
আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা উক্ত পলাতক আসামীদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আশ্বাস দিলে উত্তেজিত জনতা আন্দোলন স্থগিত করে রাস্তা অবরোধ তুলে নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল সাভার মডেল থানাধীন জামতলা এলাকায় শনিবার (১২ মার্চ) রাত ১০টা ২০ মিনিটের সময় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে পলাতক ম ০২ জন আসামীকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ড্রাইভার মোঃ ওয়াসিম @ আল-আমিন (২৫), জেলাঃ-শেরপুর ও হেলপার মোঃ শাকিল (২৮), জেলাঃ-নারায়নগঞ্জ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় উক্ত গার্মেন্টস কর্মকর্তাকে বাস চাপা দিয়েছে বলে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। ড্রাইভার মোঃ ওয়াসিম @ আল-আমিন (২৫)’কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে আশুলিয়া ক্লাসিক পরিবহণের একজন বাস ড্রাইভার।
ঘটনার দিন সে উক্ত বাসটি চালিয়ে নরসিংপুর এলাকায় পৌঁছালে সামনে থাকা অপর একটি ক্লাসিক পরিবহণের বাসকে ওভারটেক করার সময় তাদের বাস কর্তৃক মোটরসাইকেল আরোহী গার্মেন্টস কর্মকর্তা মোঃ শামছুল আলমকে চাপা দেওয়া হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, তার কোনো নিজস্ব ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই এবং ঘটনার দিন সে বিভিন্ন প্রকার নেশায় আসক্ত ছিলো। হেলপার মোঃ শাকিল (২৮), জেলাঃ-নারায়নগঞ্জ’কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে আশুলিয়া ক্লাসিক পরিবহণের একজন নিয়মিত হেলপার।
উক্ত ঘটনার দিন সে ড্রাইভার ওয়াসিম @ আল-আমিন এর সাথে হেলপার হিসেবে ডিউটিরত অবস্থায় ছিল কিন্তু সে মোটরসাইকেল আরোহী গার্মেন্টস কর্মকর্তা শামছুল আলমকে দেখেও না দেখার ভান করে ড্রাইভারকে সামনে এগিয়ে যেতে বলে যার ফলে ঘটনাস্থলেই গার্মেন্টস কর্মকর্তা নিহত হন। এছাড়াও উক্ত বাসের রুট পারমিট গত ৩১ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়।
এই বাসটির ফিটনেস সার্টিফিকেট এর মেয়াদ গত ২৬ মার্চ ২০২০ তারিখে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। এছাড়াও গত ৩১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখের পর এই বাসটির ট্যাক্স টোকেন কোন প্রকার আপডেট করা হয়নি। এখানে আরো উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে একজন তরুনীকে “আশুলিয়া ক্লাসিক পরিবহন” এর বাসে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগের চাঞ্চল্যকর মামলায় বাসের চালক-হেলপারসহ মোট ৩ জনকে র্যাব গ্রেফতার করে।
পরবর্তীতে ২০২০ সালের জুলাই মাসে “আশুলিয়া ক্লাসিক” পরিবহন এর ভেতর তরুণীকে গণ-ধর্ষণের অভিযোগে আশুলিয়া থানা পুলিশ কর্তৃক উক্ত বাসের চালক-হেলপারসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করে। আরো উল্লেখ্য যে, ২৮ জুলাই ২০১৭ সালে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডে শিকার এক যুবকের মরদেহ এই একই পরিবহন “আশুলিয়া ক্লাসিক” এর একটি বাস থেকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়’কে আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন।