সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রায় দেড় মাস হয়ে গেল ঘুরছে না গাড়ির চাকা, এতে অভাব অনটনে দিনাতিপাত করছেন নারায়ণগঞ্জের পরিবহন শ্রমিকরা।
তাদের অভিযোগ, শ্রমিকদের কল্যাণের নামে পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর তহবিলে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা জমা হলেও সে তহবিল থেকে শ্রমিকরা কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না। তাদের প্রশ্ন এসব টাকা যাচ্ছে কোথায়?
শ্রমিকদের একাধিক সূত্র মতে, মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নাম ব্যবহার করে ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পরিবহন খাতে চাঁদাবাজী অনেকটা ‘ওপেন-সিক্রেট’।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা ভান্ডারীসহ অন্যান্য শ্রমিক নেতাদের মতে, নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় শতাধিক গাড়ি বিভিন্ন রুটে যাতায়াত করতো। এ গাড়িগুলোর শ্রমিকদের থেকে প্রতিদিন একটি ইউনিয়নের কল্যাণ ফান্ডের নামে ৪০ টাকা করে ৮০ টাকা হারে ১২ হাজার টাকার মতো চাঁদা আদায় করা হয়। সে হিসেবে প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা চাঁদা আদায় হতো। এ হিসাবে বর্তমান ক্ষমতাসীনদলের ১১ বছরে ইউনিউনে জমা থাকার কথা প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক বলেন, জিলানী মিয়া, রব্বানী, সামসুজ্জামান, ইরফান, গিয়াসউদ্দিন, আলতুসহ অন্যান্য শ্রমিক নেতারা শ্রমিকদের কল্যাণ ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করে ফুলে ফেপে উঠেছে। অথচ শ্রমিকরা অর্ধাহারে – অনাহারে চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছে। শ্রমিকদের টাকা শ্রমিকদের জন্য ব্যায় করা হয় না, তাহলে এ টাকা যায় কোথায় প্রশ্ন শ্রমিকদের?
শ্রমিকদের এমনসব প্রশ্নের জবাবে জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জিলানী বলেন, নারায়ণগঞ্জে শ্রমিকদের কাছ ৩০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হতো। তবে সে চাঁদা দিয়ে মারা যাওয়া প্রায় ৬০ জন শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা হারে অার্থিক সহযোগীতা দেয়া হয়েছে, দুর্ঘটনার শিকার ও অসুস্থ শ্রমিকদের চিকিৎসার ব্যায়ভার বহন, ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রতি শ্রমিকের জন্য ১২৫০ টাকা দিয়ে কার্ড করা, প্রতিবছর ২৫০ টাকা দিয়ে সেই কার্ড রি-নিউ করা, অস্বচ্ছল শ্রমিকদের সন্তানদের বিয়েতে সহায়তা, অফিস পরিচালনা সহ নানা খাতে সেই টাকা প্রতি মাসেই খরচ হয়ে যায়।
জিলানী দাবি করেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার পক্ষ থেকে ৬শ শ্রমিককে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। এছাড়া সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের কাছ থেকে ৮’শ ৬০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী ও সাংসদ সেলিম ওসমানের কাছ থেকে আটশ শ্রমিকের জন্য ১৬ হাজার কেজি চাল সাহায্য এনে শ্রমিকদের মাঝে বিতরণ করেছি। ঈদের আগে শ্রমিকদেরকে এ সংগঠনের পক্ষ থেকে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করা হবে বলেও জানান তারা।
এদিকে শ্রমিকরা বাস-মিনিবাস-শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ শ্রমিক ইউনিয়ন এখন পর্যন্ত এক কেজি চাল দিয়ে সহায়তা করেই নাই উল্টো এ করোনা পরিস্থিতিতে পাঁচ হাজার টাকা দেয়ার নাম করে শ্রমিকদের কাছ থেকে ৫০০ করে টাকা নিয়েছে।
এদিকে জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের বলেন, আমরা কোনো শ্রমিকের কাছে একটি টাকাও নেই নাই। বরং আমরা ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩ শ শ্রমিকের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি। এছাড়াও এখন পর্যন্ত প্রায় ৭-৮ জন আহত ও নিহত শ্রমিকদের মাঝে আর্থিক অনুদান তুলে দিয়েছি।
এদিকে জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জিলানী আরো বলেন, ‘কোনো শ্রমিক না খেয়ে নেই।’ যদি কেউ না খেয়ে থাকে, তবে তাকে জানালে তিনি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিবেন সেই শ্রমিকের বাসায়,।